উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলিনায় দাবানল, হ্যারিকেন হেলেনের ধ্বংসস্তূপ ও খরায় পরিস্থিতি ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। তীব্র খরা, শক্তিশালী বাতাস এবং ঘূর্ণিঝড় হেলেনের কারণে গাছপালা উপড়ে যাওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
উত্তর ক্যারোলিনার শার্লটের প্রায় ৮০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত পোল্ক কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানকার প্রায় ১৬৫টি বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনটি অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৯ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গেছে। নর্থ ক্যারোলিনা বন বিভাগ জানিয়েছে, সোমবার রাতের হিসাব অনুযায়ী, দুটি স্থানে আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ব্ল্যাক কোভ ফায়ার নামের একটি বড় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে। তবে অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ চলছে।
এছাড়াও, প্রতিবেশী হেন্ডারসন কাউন্টিতেও স্বেচ্ছায় সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হেন্ডারসন কাউন্টির মুখপাত্র মাইক মরগান জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক দমকল কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে কিছু বাড়ির কাছাকাছি আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই আমরা বাড়িগুলোকে রক্ষা করতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে, দক্ষিণ ক্যারোলিনার পার্বত্য অঞ্চলে দুটি দাবানল জ্বলছে। টেবিল রক স্টেট পার্ক এবং পার্সিমোন রিজের কাছের আগুনে প্রায় ২.৩ বর্গমাইল এলাকা পুড়ে গেছে। দক্ষিণ ক্যারোলিনা বন কমিশন জানিয়েছে, উভয় স্থানেই মানুষের কার্যকলাপের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এবং সোমবার রাতের হিসাব অনুযায়ী, কোনো আগুনই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষের ধারণা, ঘরবাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। যদিও গত সপ্তাহান্তে প্রায় ১০০টি বাড়ির বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে বন কমিশন আগের ঘোষণা সংশোধন করে জানায়, পার্সিমোন রিজের কাছাকাছি সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যদি ভবিষ্যতে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
কমিশন আরও জানায়, “আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়া উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ আর্দ্রতা খুবই কম থাকবে এবং বাতাসের গতি আগুন ছড়ানোর জন্য সহায়ক হবে।
নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বন ও পরিবেশ সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট শেলার জানিয়েছেন, গত বছর হ্যারিকেন হেলেনের কারণে গাছপালা উপড়ে যাওয়ার ফলে অঞ্চলে শুকনো আবহাওয়া এবং দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় দাবানল দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “হেলেন প্রচুর পরিমাণে শুকনো কাঠ ফেলে গেছে। আর এই শুকনো আবহাওয়া সেই কাঠগুলোকে দ্রুত শুকিয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টি সত্ত্বেও ক্যারোলিনার অধিকাংশ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে এবং মাঝারি খরা দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস