আতঙ্ক! চ্যাটজিপিটি-র নেশা: বাড়ছে একাকিত্ব?

নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, যারা ChatGPT-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (AI) চ্যাটবট-এর সঙ্গে বেশি সময় কাটান, তাঁদের মধ্যে একাকীত্ব বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। একইসঙ্গে, এই ধরনের ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবেগগত নির্ভরশীলতাও বাড়ে এবং অফলাইনে সামাজিক সম্পর্ক কমে আসে।

সম্প্রতি, ওপেনএআই (OpenAI) এবং এমআইটি মিডিয়া ল্যাব (MIT Media Lab) -এর যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ChatGPT-এর সঙ্গে যারা গভীর আবেগপূর্ণ ব্যক্তিগত আলোচনা করেন, তাঁদের মধ্যে একাকীত্বের অনুভূতি বেশি। তবে, এটি স্পষ্ট নয় যে চ্যাটবট ব্যবহারের কারণেই এই একাকীত্ব বাড়ছে, নাকি একাকীত্ব থেকে মুক্তি পেতেই মানুষজন এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ChatGPT-এর সঙ্গে বেশি সময় কাটানো, অর্থাৎ যারা এই চ্যাটবট-এর ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের মধ্যে অন্যদের তুলনায় একাকী থাকার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণায় প্রায় ৪০ মিলিয়ন বার ChatGPT-এর সঙ্গে হওয়া কথোপকথন বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি, প্রায় ১০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর ওপর একটি চার-সপ্তাহের পরীক্ষা চালানো হয়, যেখানে তাঁদের দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ মিনিট ChatGPT-এর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছিল। এই সময়কালে তাঁদের একাকীত্ব, সামাজিক সম্পর্ক এবং চ্যাটবটের ওপর আবেগগত নির্ভরতা কতখানি, তা পরিমাপ করা হয়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রথমে ভয়েস-ভিত্তিক চ্যাটবটগুলি টেক্সট-ভিত্তিক চ্যাটবটগুলির তুলনায় একাকীত্ব কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়।

এমনকি, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে, চার সপ্তাহ পর বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে যাওয়ার প্রবনতাও কিছুটা কমে যায়। এছাড়া, যারা তাঁদের লিঙ্গের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কণ্ঠে চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যেও একাকীত্ব এবং আবেগগত নির্ভরতা বেশি দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, মানুষ যেহেতু মানবিক আচরণের সঙ্গে মেশিনের আচরণকে মেলাতে চায়, তাই এআই চ্যাটবটগুলি বিপজ্জনক হতে পারে।

তাঁদের মতে, মানুষের সামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সার্ভে ইনস্টিটিউট ফর পিপল-সেন্টার্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর পরিচালক ড. অ্যান্ড্রু রোগোস্কি (Dr. Andrew Rogoyski) বলেন, “আমরা মানুষের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করছি, তাঁদের মৌলিক আবেগগত বিষয়গুলোর সঙ্গে না জেনে খেলছি, যার দীর্ঘমেয়াদী ফল সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আমরা সামাজিক মাধ্যমের কিছু খারাপ দিক দেখেছি, কিন্তু এটা সম্ভবত আরও অনেক বেশি বিস্তৃত।”

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. থিওডোর কসকো (Dr. Theodore Cosco) মনে করেন, এই গবেষণা “চ্যাটবটের অতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগের কারণ” তৈরি করে।

তবে, তিনি এও বলেন, “এটি আকর্ষণীয় এবং উৎসাহজনক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।

তাঁর মতে, “এমন এআই সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে, যা বিশেষভাবে একাকীত্বে ভোগা মানুষের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই সরঞ্জামগুলিকে কীভাবে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।”

ইউনিভার্সিটি অফ সারের আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ বিষয়ক গবেষক ড. ডরিস ডিপোল্ড (Dr. Doris Dippold) এর মতে, চ্যাটবটগুলির ওপর আবেগগত নির্ভরতার কারণগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।

তাঁর প্রশ্ন, “চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার কারণে কি ব্যবহারকারীরা ল্যাপটপ বা ফোনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে যান এবং এর ফলে তাঁদের স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্ক কমে যায়? নাকি ChatGPT-এর মতো ডিজিটাল সঙ্গীর মাধ্যমে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া তৈরি হয়, যা মানুষকে আরও বেশি কিছুর জন্য আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে?”

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *