**লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে বিপর্যয়, ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার যাত্রী**
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর লন্ডনের হিথরোতে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ব্যাপক বিমান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শুক্রবার (গতকাল) বিমানবন্দরের কাছে একটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এর জেরে এরই মধ্যে এক হাজার তিনশো’র বেশি ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে এবং কয়েক দিন ধরে এই বিশৃঙ্খলা চলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
হিথরোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে কিছু ফ্লাইট পরিচালনার কাজ শুরু হয়েছে এবং শনিবার থেকে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে যাত্রীদের বিমানবন্দরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
লন্ডন হিথরোর এই বিপর্যয়ের কারণে শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ১২০টির বেশি বিমান লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল।
হিথরো বিমানবন্দর প্রায় ৯০টি ভিন্ন এয়ারলাইন্সের কেন্দ্র, যার মধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং ভার্জিন আটলান্টিকের মতো বৃহৎ সংস্থা রয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে হিথরোর স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে বেশ সময় লাগবে।
বিমান চলাচল বিশ্লেষক সংস্থা সিরিয়াম-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার হিথরো থেকে ৬১৫টি এবং সেখানে ৬০০টির বেশি ফ্লাইট আসার কথা ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার জেরে বিমান, ক্রু এবং যাত্রীদের শিডিউলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, যা স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
লন্ডনের একটি শীর্ষস্থানীয় ভ্রমণ পরামর্শক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল চার্লস-এর মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। তাঁর ধারণা, ক্ষতিগ্রস্ত বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৭৩ থেকে ৩৮৩ কোটি টাকা) পর্যন্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাইন্ডলি ফ্লাইয়ার নামক একটি ভ্রমণ সহায়তা সংস্থার প্রধান, ব্রেট স্নাইডার এই পরিস্থিতিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, বিমানবন্দরের এই অচলাবস্থা অন্যান্য বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সেও প্রভাব ফেলবে।
হিথরোর এই ঘটনার কারণে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলোর ওপর এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
কারণ, গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের চাপ শুরুর আগেই এই ঘটনা ঘটায় তাদের যাত্রী ব্যবস্থাপনার সুযোগ কিছুটা বেশি থাকবে।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স তাদের লন্ডনগামী ফ্লাইটগুলো আমস্টারডাম, ব্রাসেলস, প্যারিস বা এডিনবার্গে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের তিনটি ফ্লাইট হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট বা প্যারিসে অবতরণ করেছে অথবা সিঙ্গাপুরে ফিরে গেছে।
হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিকও তাদের লন্ডনগামী কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে। এয়ার ফ্রান্সও হিথরোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আটটি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
ভার্জিন আটলান্টিক তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, যাত্রীরা হয় পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন, অথবা ভ্রমণের তারিখ পরিবর্তন করতে পারবেন অথবা পুরো টিকিটের টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
অন্যদিকে, কম খরচে বিমান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা রায়ানএয়ার ডাবলিন ও লন্ডন স্ট্যানস্টেডের মধ্যে আটটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের সহায়তা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক যাত্রী জানান, হিথরোর এই পরিস্থিতি খুবই কঠিন। বিমানবন্দরের এই ঘটনার কারণে আগামী কয়েক দিন ভ্রমণকারীদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
বর্তমানে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শুক্রবার ভ্রমণের জন্য হিথরোতে যাওয়া যাত্রীদের বিমানবন্দরে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন