গাজায় হামাস বিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসছে জনতা! যুদ্ধের অবসান চাইছে তারা

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামল কয়েকশো প্যালেস্টিনীয়, যুদ্ধ বন্ধের দাবি

গাজা উপত্যকায় হামাসের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামল কয়েকশো প্যালেস্টিনীয়। মঙ্গলবার রাতের দিকে উত্তর গাজায় হওয়া এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা “হামাস নিপাত যাক” এবং “হামাস সন্ত্রাসী” স্লোগান দেয়। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এই প্রথম গাজায় এত বড় বিক্ষোভ দেখা গেল।

বেইত লাহিয়া অঞ্চলে, একটি হাসপাতালের সামনে এই বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে ব্যানার বহন করে। তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল, “আমরা শান্তি চাই।” জানা গেছে, বিক্ষোভের সমর্থনে একটি আবেদন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে ছড়িয়েছিল।

একজন বিক্ষোভকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমি জানি না এই বিক্ষোভের আয়োজন কারা করেছে। তবে আমি মানুষের হয়ে একটি বার্তা দিতে এখানে এসেছি: যুদ্ধ যথেষ্ট হয়েছে।” তিনি আরও জানান, হামাসের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

আরেক বিক্ষোভকারী, মাজদি, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যদি গাজায় হামাসের ক্ষমতা ত্যাগ করাই সমস্যার সমাধান হয়, তবে কেন হামাস ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করছে না?”

অন্যদিকে, গাজা শহরের পশ্চিমে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়। সেখানেও যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানো হয় এবং খাদ্য সংকটের কথা তুলে ধরা হয়। বিক্ষোভকারীরা জানায়, “আমরা খেতে চাই।”

গাজার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এই বিক্ষোভ হয়তো দ্রুত উপত্যকার অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়বে। দেড় বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে সেখানকার মানুষজন চরম দুর্দশার শিকার।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে গাজায় ছোটখাটো কিছু প্রতিবাদ হয়েছে, যেখানে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবারকের বিক্ষোভে ‘বিদনা ন’ইশ’ আন্দোলনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে গাজায় অর্থনৈতিক বিক্ষোভের সময় এই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যদিও হামাস সেই সময় এই বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করে এবং ফাতাহকে দায়ী করে।

২০০৭ সাল থেকে গাজায় হামাস ক্ষমতায় রয়েছে। ইসরায়েল সবসময় গাজার মানুষকে হামাসের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে। ২ মার্চ ইসরায়েল সাহায্য প্রবেশে বাধা দেওয়ায় মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে গাজায় অন্তত ৭৯২ জন নিহত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর।

হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় নিহত হয়েছে ৫০,০২১ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *