হাতির আক্রমণে ১০ জনের মৃত্যু: মালাউইতে তোলপাড়!

মালাউইতে হাতি স্থানান্তরের জেরে ১০ জনের মৃত্যু, ক্ষতিপূরণের দাবিতে আইনি লড়াই শুরু। আফ্রিকার দেশ মালাউইতে হাতি স্থানান্তরের একটি প্রকল্পের ফলস্বরূপ সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

এই প্রকল্পের কারণে বন্য হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় অন্তত ১০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা আন্তর্জাতিক প্রাণী কল্যাণ তহবিল (International Fund for Animal Welfare – IFAW)-এর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এবং উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

জানা গেছে, কাসুঙ্গু জাতীয় উদ্যানে হাতির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটাতে ২০২২ সালের জুলাই মাসে লিওন্ডে জাতীয় উদ্যান থেকে ২৬৩টি হাতি আনা হয়। এর পরেই সেখানকার স্থানীয় জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হাতির হানায় তাদের জীবন ও জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাসুঙ্গু জাতীয় উদ্যানের আশেপাশে বসবাসকারী ১৬৭টি গ্রামের মানুষ বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাতির আক্রমণে নিহত ১০ জনের মধ্যে ৩১ বছর বয়সী জন কায়েদেজেকাও ছিলেন। তিনি সেপ্টেম্বর ২০২২-এ মাঠে কাজ করার সময় হাতির পাল দ্বারা পদদলিত হন।

এছাড়াও ৩১ বছর বয়সী মাসিয়ে ফিরি নামের এক নারী এক বছর পর তার দুই বছর বয়সী সন্তানের সাথে বাগানে থাকাকালীন একটি পুরুষ হাতির আক্রমণে নিহত হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, হাতির আক্রমণে ইতোমধ্যে ৫০ জনের বেশি শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে।

জম্মু প্রদেশের এক কৃষক জানান, তিনি যখন তার জমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন দুটি হাতি ও একটি বাচ্চা হাতির মুখোমুখি হন। “আমি দ্রুত পালাতে পারিনি।

তারা আমাকে পায়ের নিচে ফেলে দেয় এবং গাছের ডাল দিয়ে ঢেকে দেয়,” তিনি বলেন। “আমি চার মাস লুমেজি হাসপাতালে ছিলাম।

আমার পেটের এক দিক ফুলে গেছে, আর আমি এখন আমার হাত সোজা করতে পারি না। ফলে চাষ করতেও পারি না। অন্যের দয়ায় বেঁচে আছি।

একা চলাফেরা করতেও ভয় লাগে।

যদিও হাতিগুলি দীর্ঘদিন ধরেই এই পার্কে বসবাস করে আসছিল, গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই স্থানান্তরের পরেই বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বেড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হাতিরা নিয়মিতভাবে তাদের ফসলের ক্ষতি করছে, যা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের আইনজীবী সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ‘লেই ডে’ (Leigh Day)-এর মাধ্যমে আইএফএডব্লিউ-র বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য, জাম্বিয়া এবং মালাউইতে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আবেদনকারীদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

আইএফএডব্লিউ জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বর মাসে এই মামলার কথা জানতে পারে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা আরও জানায়, মালাউয়ের সরকারই জাতীয় উদ্যানগুলির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।

আইএফএডব্লিউ আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই হাতি স্থানান্তরের কাজটি করেছিল।

আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, তারা হাতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চান, তবে আইএফএডব্লিউ-কে তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

তাদের দাবি, হয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, না হয় পার্কের চারপাশে বেড়া দিতে হবে, অথবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের ও তাদের ফসলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *