ইউক্রেন যুদ্ধ যখন সমঝোতার আলোচনার দিকে এগোচ্ছে, তখন কেন রাশিয়া সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে কিয়েভ?
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে, ইউক্রেন কেন হঠাৎ করে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে? সম্প্রতি রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলগোরোদের দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যদিও এটিকে ব্যাপক কোনো আক্রমণ বলা যাচ্ছে না, তবে এর কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে। মূলত, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে বিভক্ত করতে এবং নিজেদের এলাকার সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
বেলগোরোদ অঞ্চল, যা মস্কো থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এখানে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের হামলার মূল উদ্দেশ্য হলো একটি বাফার জোন তৈরি করা।
বাফার জোন হলো এমন একটি এলাকা যা দুটি দেশের মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সৈন্যদের তাদের সীমান্ত অতিক্রম করে সুমি অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দিতে চায়। একই সাথে পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শহর পক্রোভস্কে চাপ কমানোরও চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের আক্রমণ রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করতে সহায়তা করে। এর ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সেনাদের সুমি অথবা পূর্বাঞ্চলে একত্রিত হতে বাধা দিতে পারবে।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাই মিত্রোখিন মনে করেন, বেলগোরোদের এলাকা তুলনামূলকভাবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য সহজ লক্ষ্য, কারণ এই অঞ্চলের ভূমি সুমির উচ্চভূমির চেয়ে নিচু।
এই আক্রমণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কিয়েভ আলোচনার টেবিলে মস্কোকে চাপে রাখতে চাইছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
যদিও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানার মাধ্যমে মস্কোকে আলোচনার টেবিলে নমনীয় হতে বাধ্য করতে চাইছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউক্রেনের এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার জন্য একটি সতর্কবার্তা। এর মাধ্যমে কিয়েভ বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে, তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডেও আঘাত হানতে সক্ষম।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, তারা বেলগোরোদে “উসকানি” ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবে, এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত নয়।
আক্রমণের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটছে বলে জানা গেছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের এই কৌশলগত পদক্ষেপগুলো একদিকে যেমন রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে দুর্বল করবে, তেমনি আলোচনার টেবিলে কিয়েভের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা