গাড়ি স্ক্র্যাপ ঘোষণার ঘটনায় ভুক্তভোগী, তদন্তে চাঞ্চল্যকর মোড়!

গাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে এক ব্রিটিশ নাগরিক। জানা যায়, তার গাড়ির নম্বর ব্যবহার করে অন্য কেউ বীমার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

যদিও তিনি নিজে কোনো দুর্ঘটনার শিকার হননি এবং কোনো বীমা দাবিও করেননি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক ব্যক্তি, সংক্ষেপে টিএল (TL), তার পুরনো একটি কিয়া গাড়ি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন।

গাড়ি পরীক্ষার সময় ‘ওয়েবাইএনিক্যার’ (webuyanycar) নামক একটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়, টিএল-এর গাড়ির নম্বর ব্যবহার করে অন্য কেউ গাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ বীমার টাকা তুলে নিয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে তার গাড়িটিকে ‘রাইট অফ’ (Written Off) অর্থাৎ, বাতিল বা অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘটনাটি শুনে টিএল-এর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বীমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বীমা কোম্পানি জানায়, তাদের রেকর্ডে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। এরপর তিনি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

শুরুতে, বীমা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষও (underwriter) জানায় যে তাদের কাছে এমন কোনো তথ্যের প্রমাণ নেই। তবে, একটি জাতীয় ডাটাবেজে অনুসন্ধানের পর তারা জানতে পারে যে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টিএল-এর গাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ফার্স্ট সেন্ট্রাল’ (1st Central) নামক একটি বীমা কোম্পানি এই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং তাদের কাছে দাবির নম্বরও রয়েছে।

টিএল ফার্স্ট সেন্ট্রালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, টিএল-এর গাড়ির বীমা তাদের কোম্পানি করেনি এবং এমন কোনো দাবির রেকর্ডও তাদের কাছে নেই।

এরপর টিএল ঘটনাটি বিস্তারিত জানাতে বেডফোর্ডশায়ার পুলিশ-এর দ্বারস্থ হন। পুলিশ তাকে ‘অ্যাকশন ফ্রড’-এর (Action Fraud) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।

কিন্তু, তাদের ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়, বিষয়টি পুলিশের রেকর্ডভুক্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। টিএল-কে যুক্তরাজ্যের ড্রাইভার অ্যান্ড ভেহিকল লাইসেন্সিং এজেন্সি-র (DVLA) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

ডিভিএলএ-কে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পর, তারা জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তাদের ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় টিএল পুনরায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পরবর্তীতে, ডিভিএলএ-র জালিয়াতি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তার গাড়ির নম্বর প্লেট ক্লোন করা হয়েছে এবং তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।

এই ঘটনার জেরে টিএল-এর গাড়ি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি এবং তিনি কোনো সুরাহা পাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি চরম হতাশায় ভুগছেন।

কিভাবে একজন ব্যক্তি কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার গাড়ির ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করতে পারে, তা তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না।

তিনি জানিয়েছেন, সব হারিয়ে এখন তার গাড়িটি ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

পরবর্তীতে, ঘটনাটি নিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর (The Guardian) ‘কনজিউমার চ্যাম্পিয়ন্স’ (Consumer Champions) বিভাগের পক্ষ থেকে ফার্স্ট সেন্ট্রালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টাইপিংয়ের (typing) ভুলে এই ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফার্স্ট সেন্ট্রালের একজন মুখপাত্র জানান, ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে টিএল-কে প্রথমে সাহায্য করা সম্ভব হয়নি।

পরে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানতে পারেন, একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সঙ্গে তাদের ডাটাবেসে অন্য একটি গাড়ির নম্বরের সামান্য ভুল ছিল।

এর ফলে এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভুলের জন্য তারা টিএল-কে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে।

টিএল-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ৫৬০ পাউন্ড দেওয়ার কথা এবং এই সময়ের মধ্যে গাড়ির অবমূল্যায়নের জন্য তিনি অতিরিক্ত ১১০ পাউন্ড পাবেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *