গাজায় গণহত্যা: আজও কি আমরা শুধু সংখ্যা?

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এখনো চলছে, যার ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের হামলা শুরু হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

আল জাজিরার একটি নিবন্ধে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে। নিবন্ধে গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে খাদ্য, জল, চিকিৎসা পরিষেবা, শিক্ষা এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার ফলে গাজায় নতুন করে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজার পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

হামলার প্রথম রাতে গাজার বিভিন্ন স্থানে বোমা বর্ষণ করা হয়, যার ফলে বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুও ছিল।

আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে জায়গা সংকট দেখা দেয়। হামলার তীব্রতা এখনো কমেনি, যার ফলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গাজায় মানবিক বিপর্যয় চললেও বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কেবল নিন্দা জ্ঞাপন করা হচ্ছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুঃখ কমাতে যথেষ্ট নয়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছে। তারা প্রতিবাদ, শিল্প, চলচ্চিত্র এবং সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তাদের কথা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, বিশ্বকে তাদের মানুষ হিসেবে গণ্য করতে বাধ্য করা।

“উই আর নট নাম্বারস” (We Are Not Numbers)-এর মতো উদ্যোগগুলো এই ডি-হিউম্যানাইজেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে গাজার মানুষের ব্যক্তিগত গল্প তুলে ধরা হয়, যা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় যে তারা কেবল সংঘাতের শিকার হওয়া মানুষ নয়, বরং তাদের নিজস্ব নাম, ইতিহাস, আবেগ এবং স্বপ্ন রয়েছে।

তবে এসব চেষ্টার পরেও, ফিলিস্তিনিদের এখনো “সংখ্যা” হিসেবে দেখা হচ্ছে। যখন কোনো পরিবার বিমান হামলায় নিহত হয়, তখন গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়, কিন্তু তাদের পরিচয় তুলে ধরা হয় না।

ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সংবেদনশীলতার অভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নিবন্ধের লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বিশ্ব গাজার শিশুদের মৃত্যুভয় ও কষ্টের মাঝেও টিকে থাকার জন্য উৎসাহিত করে? কেন ক্ষুধার্ত শিশুদের অন্যদের চেয়ে বেশি ধৈর্য্য ধরতে বলা হয়?

লেখকের মতে, নীরবতা মানেই হলো সম্মতি। তাই গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত আছে এবং ফিলিস্তিনিরা বিশ্ববাসীর কাছে একটি “সংখ্যা” হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।

(তথ্য সূত্র: আল জাজিরা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *