গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন করে হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওচা (OCHA) মঙ্গলবার জানায়, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় পুনরায় হামলা শুরু করার পর থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, “নিজের সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি আশ্রয় সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।”
গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বিমান একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে, এতে অন্তত আটজন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছয় মাস বয়সী একটি শিশুও ছিল।
এছাড়া, গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি আবাসিক ফ্ল্যাটে বোমা হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে।
গাজা থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম জানান, “ইসরায়েলি বাহিনী গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে নির্বিচারে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
এখানকার মানুষজন পরবর্তী পরিস্থিতির কথা ভেবে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কারণ, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কোনো ফলপ্রসূ হচ্ছে না।”
জাতিসংঘের ওচা-র তথ্যমতে, রাফাহ, খান ইউনিস এবং গাজার উত্তরাঞ্চলের প্রায় আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
গাজা শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, বাস্তুচ্যুত মানুষজন এখন সামান্যতম আশ্রয়ের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজছে।
তিনি বলেন, “তারা হয়তো তাঁবুতে আশ্রয় নিচ্ছে, যেখানে অতিরিক্ত ভিড় এবং বসবাসের অযোগ্য পরিবেশ। এছাড়া, তারা আশ্রয় নিচ্ছে আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।
বাস্তুচ্যুতির কারণে তারা খাদ্য, জল ও মানসিক আঘাতের মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া, তাদের মধ্যে সবসময় হামলার আতঙ্ক কাজ করছে।”
ওচা আরও জানায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে মূলত এই বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকাকে খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।
ডাক্তার বিও বর্ডারস (MSF) জানিয়েছে, গাজার অবশিষ্ট জল সরবরাহ ব্যবস্থা এখন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে এটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে এবং সেখানকার মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানির প্রবেশাধিকার কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
চিকিৎসা বিষয়ক এই এনজিও-র মতে, নিরাপদ পানির অভাব মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এমএসএফ-এর গাজার চিকিৎসা সমন্বয়কারী চিয়ারা লোদি বলেন, “ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া গাজার ধ্বংসযজ্ঞ এবং অবরোধের প্রত্যক্ষ ফল।
গুরুতর আহত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের কর্মীরা শিশুদের চিকিৎসা করছেন, যাদের মধ্যে স্ক্যাবিজের মতো প্রতিরোধযোগ্য চর্মরোগ বাড়ছে। এটি শুধুমাত্র অস্বস্তিকরই নয়, গুরুতর ক্ষেত্রে তারা চামড়া খুঁটতে থাকে এবং তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে।”
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধ না করেই তিন-পর্যায়ের চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করে।
ওচা আরও জানায়, গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলায় আটজন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হওয়া ত্রাণকর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৯ জনে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা