অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত! দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাচীনতম গউংসা মন্দিরের ভয়াবহ পরিণতি

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দাবানলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভয়াবহ আগুনে ধ্বংস হয়ে গেছে সপ্তম শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী গউংসা মন্দির।

জানা গেছে, দাবানলের কারণে মন্দিরের দুইটি মূল্যবান ‘জাতীয় সম্পদ’ সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

বুধবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত পাঁচ দিন ধরে চলা এই দাবানলে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও, আগুনে পুড়ে গেছে দুইশ’র বেশি ঘরবাড়ি এবং প্রায় ২৭ হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে।

কোরিয়ার কর্মকর্তাদের মতে, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।

গউংসা মন্দিরটি ছিল দেশটির ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম। ৭ম শতকে শিলা রাজবংশের আমলে নির্মিত এই মন্দিরটি উইসেং শহরের দেউংগুন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ছিল।

মন্দিরের ভেতরে প্রাচীন যুগের কোনো স্থাপত্য কাঠামো না থাকলেও, এখানে পরবর্তী সময়ে নির্মিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছিল।

মঙ্গলবার তীব্র বাতাসের কারণে দাবানল আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যার ফলে প্রায় ২০টি ভবনসহ মন্দিরের ৩০টির বেশি কাঠামো সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। আগুনে ধ্বংস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে ছিল ১৬৬৮ সালে নির্মিত ‘গাউনরু’ প্যাভিলিয়ন এবং ১৯০৪ সালে রাজার দীর্ঘায়ু কামনা করে তৈরি করা ‘ইওনসুজন’ নামক ঐতিহ্যপূর্ণ কাঠামো।

কোরিয়া হেরিটেজ সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই উভয় কাঠামোই জোসোন রাজবংশের আমলে নির্মিত হয়েছিল এবং সেগুলোকে ‘জাতীয় সম্পদ’-এর মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।

মন্দিরের একজন প্রবীণ ভিক্ষু ডোরিউন জানান, তিনি একসময় এই মন্দিরে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করেছেন।

তিনি বলেন, “সকালে এসে দেখি সব কিছু ছাই হয়ে গেছে। খুবই শূন্যতা অনুভব করছি। জীবন ক্ষণস্থায়ী।” ডোরিউন বর্তমানে একটি বৌদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং মন্দিরের দেখাশোনা করেন।

তিনি আরও জানান, সৌভাগ্যবশত, তারা মন্দিরের ৮ম শতকে নির্মিত একটি পাথরের বুদ্ধ মূর্তিটিকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

ডোরিউন আরও জানান, মন্দিরের প্রায় ২০ জন ভিক্ষু ও অন্যান্য কর্মী সেখানে বসবাস করেন।

তবে আগুনে কেউ হতাহত হননি। কোরিয়া হেরিটেজ সার্ভিস আরও জানিয়েছে, মন্দিরের আরও দুটি ছোট আকারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যার মধ্যে একটি পাথরের স্তূপও রয়েছে, সেগুলো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ঐতিহাসিক মন্দির এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলির এই ক্ষতি দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের জন্য অপূরণীয়।

এই ঘটনার পর দেশটির সরকার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *