কানাডার টেনিস তারকা গ্যাবি ডাব্রাউস্কি, যিনি পেশাদার সার্কিটে একজন শীর্ষস্থানীয় ডাবলস খেলোয়াড়, ব্যক্তিগত জীবনে এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এপ্রিল ২০২৩-এ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর, তিনি খেলা চালিয়ে যান এবং ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। এই দুঃসময়েও তার অদম্য মানসিকতা এবং লড়াই করার ক্ষমতা ক্রীড়াবিদদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ডাব্রাউস্কির সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয় অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক এবং মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট, ডব্লিউটিএ ফাইনালসের শিরোপা জয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার কারণে খেলার সময়ে শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, তিনি কোর্টে ফিরে আসার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান।
এমনকি এমনও সময় ছিল যখন তিনি শট নেওয়ার জন্য তার হাত যথেষ্ট উপরে তুলতে পারতেন না। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি, বরং নতুন উদ্যমে ফিরে এসে প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব জয় করা সম্ভব।
চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে, ডাব্রাউস্কি জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পান। তিনি তার পেশা হিসেবে টেনিস খেলতে পারাকে সৌভাগ্য মনে করতে শুরু করেন এবং খেলার প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে থাকেন।
তার মতে, সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল কাজটি ভালোবাসতে পারা এবং নিজের উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া। প্যারিস অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতার সময় তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও লড়ে গিয়েছিলেন, যা তার মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ।
ডাব্রাউস্কির ক্যান্সার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের বসন্তে, যখন তিনি তার বাম স্তনে একটি পিণ্ড অনুভব করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তিনি সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি।
তবে, পরবর্তীতে ডব্লিউটিএ (WTA)-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়, অন্য একজন চিকিৎসক তাকে দ্রুত স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেন। এরপর দ্রুতগতিতে চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
ম্যামোগ্রাম, আলট্রাসাউন্ড এবং বায়োপসির মাধ্যমে রোগ সনাক্ত করা হয়। সৌভাগ্যবশত, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ায় তিনি কেমোথেরাপির মতো কঠিন চিকিৎসা এড়াতে পেরেছিলেন।
ডব্লিউটিএ খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষভাবে নজর রাখে। এই সংস্থাটি বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করে, যেখানে খেলোয়াড়দের শারীরিক গঠন, হাড়ের ঘনত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করা হয়।
এই পরীক্ষার মাধ্যমেই ডাব্রাউস্কির রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।
ডাব্রাউস্কি এখন স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করা গেলে, এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত থাকে।
ডাব্রাউস্কির জীবন প্রমাণ করে, স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার সময়ও কীভাবে ভালো থাকা যায়। ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যেও তিনি টেনিস খেলা চালিয়ে গেছেন, যা তাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি এখন তার শরীরের প্রতি আরও যত্নবান হচ্ছেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছেন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সুস্থ থাকার চেষ্টা করছেন।
টেনিস তার কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু এই রোগ থেকে সেরে ওঠার পর তিনি খেলাটিকে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছেন। এখন জয় তার কাছে আনন্দ নিয়ে আসে, তবে পরাজয় ততটা কষ্ট দেয় না।
ডাব্রাউস্কি মনে করেন, খেলাটি তার জীবনের একটি অংশ, তবে এটিই তার পরিচয় নয়।
ডাব্রাউস্কির এই গল্প আমাদের সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্তকরণ জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন