আতঙ্কের মাঝে হাসি: কমেডি জীবনে জনি বলের স্মৃতি!

ব্ল্যাকপুলের একটি হোটেলে অপ্রত্যাশিতভাবে কমেডি জগতে পা রাখা জনি বলের জীবনের গল্প।

ইংল্যান্ডের কমেডি জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জনি বল। তবে তাঁর এই খ্যাতি একদিনে আসেনি। বরং এর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম আর পরিস্থিতির শিকার হয়ে কমেডি জগতে প্রবেশ করার এক দারুণ গল্প। জনি বলের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছিল ব্ল্যাকপুলের একটি হোটেলে।

তখন গ্রীষ্মকাল, তিনি রেডকোট হিসেবে কাজ করতেন। একদিন হোটেলের বিনোদন ব্যবস্থাপক তাঁকে একটি প্রশ্ন করলেন, “আপনি কি কোনো অভিনয় করতে পারেন?” জনি বলের উত্তর ছিল, “না”। এর পরই শুরু হয় আসল ঘটনা। কারণ, সেই সময় সেখানকার প্রধান কৌতুকাভিনেতা মধুচন্দ্রিমায় ছিলেন এবং দ্বিতীয়জন তখনও আসেননি। ফলে, দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য একজন অভিনেতার খুব প্রয়োজন ছিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, জনি বলকেই সেই দায়িত্ব নিতে হলো।

আসলে, এর আগে তিনি প্রায় ৬০ বার সহকর্মী রিকি ম্যাককের কমেডি পরিবেশনা দেখেছেন। ফলে তাঁর মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল প্রতিটি শব্দ। সেই রাতেই, কোনো উপায় না পেয়ে, তিনি রিকির সেই পরিচিত কমেডি পরিবেশনাটি করেন। প্রথম কয়েকটা কৌতুক বলার পরেই জনি বল বেশ স্বস্তি অনুভব করেন। এরপর, তিনি আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয় করতে শুরু করেন।

কৌতুক পরিবেশনার পর, এক তরুণী এসে তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং জানান, নতুন রেডকোট রিকি ম্যাককে এসে পৌঁছেছেন। জনি বল তো একেবারে হতবাক! এরপর তিনি রিকির সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে পুরো ঘটনা জানান। রিকি প্রথমে কিছুটা হতবাক হলেও, পরিস্থিতি সামলে নেন। এরপর তাঁরা একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন এবং রিকির পরামর্শে জনি বল তাঁর নিজের কমেডি পরিবেশনা তৈরি করেন।

জনি বল তাঁর নতুন পরিবেশনার জন্য একটি বিশেষ চরিত্র তৈরি করেন – “A Bag of Nerves”। মঞ্চে উঠেই তিনি একটি কাগজের ব্যাগ ধরতেন এবং কাঁপতে কাঁপতে বলতেন, “আমি শুরু করতে চাই…”। এরপর ব্যাগটির দিকে তাকিয়ে বলতেন, “স্নায়ুর ব্যাগ!” এই অভিনবত্ব দর্শকদের হাসিতে ভরিয়ে দিত।

ধীরে ধীরে, জনি বল বুঝতে পারলেন কীভাবে দর্শকদের মন জয় করতে হয়। তিনি তাঁর পরিবেশনায় এমন কিছু কৌতুক যোগ করতেন যা দর্শকদের পছন্দ ছিল। এভাবে, তিনি কমেডি জগতে নিজের স্থান তৈরি করেন।

এই সময়েই তিনি বব মঙ্কহাউজের মতো কিংবদন্তি কমেডিয়ানের সান্নিধ্যে আসেন। ববের কাছ থেকে তিনি কমেডির কৌশল সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, কীভাবে একটি ভালো পরিবেশনা তৈরি করা যায়।

পরবর্তীতে, জনি বল “লিভারপুল কমেডি ওয়েভ”-এর অংশ হন। যদিও তিনি নিজে লিভারপুলের বাসিন্দা ছিলেন না। এই সময়ে তিনি তাঁর বন্ধু ফ্রেডি ডেভিস এবং আরও কয়েকজন কমেডিয়ানের সঙ্গে কাজ করেন।

জনি বলের এই যাত্রা প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকলে, যে কেউ সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারে। তাঁর এই গল্প আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *