ফরাসি চরম-ডানপন্থী দলের প্রতি ইসরায়েলের নমনীয়তা: বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ফরাসি চরম-ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল র্যালি’র প্রতি যে নমনীয়তা দেখাচ্ছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা নাৎসিদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ অনেককে হতবাক করেছে।
খবর অনুযায়ী, ন্যাশনাল র্যালির নেতা জর্দান বারদেলাকে সম্প্রতি জেরুজালেমে একটি ইহুদি বিদ্বেষ বিরোধী সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিশ্বজুড়ে নতুন মিত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছেন, যাদের অতীতের অনেক কর্মকাণ্ড বিতর্কিত।
বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এই দলগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের একটি সংযোগ তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে ফরাসি ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ন্যাশনাল র্যালি তাদের “ইসলামপন্থী” হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারে।
তবে, দলের অতীতের সঙ্গে জড়িত অনেক বিতর্কিত বিষয় এখনো তাদের উদ্বেগের কারণ। প্যারিসের রাব্বি এমিল আকেরম্যানের মতে, অনেক ইহুদি এখন চরম-ডানপন্থীদের কথা শুনতে আগ্রহী হচ্ছেন, কারণ তারা মনে করেন এই দলই তাদের রক্ষা করতে পারে।
তিনি আরও জানান, তার সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন এবং অনেকে ভয়ের কারণে তাদের ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ফরাসি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্সে ২০২৩ সালে ১,৫৭০টি ইহুদি বিদ্বেষমূলক ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরাসি চরম-ডানপন্থীরা এখন তাদের রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এই ইস্যুগুলো ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও ডানপন্থার প্রভাব বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এমন কিছু ব্যক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার চালাচ্ছেন, যাদের এক সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতেও কাজ করার অনুমতি ছিল না।
প্রাক্তন ইসরায়েলি কূটনীতিক ড্যানিয়েল শেকের মতে, বারদেলাকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তটি “আগে থেকেই আসার সম্ভাবনা ছিল।”
তবে, ইসরায়েলের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অ্যাভি পাজনার মনে করেন, ন্যাশনাল র্যালি অনেক পরিবর্তন এনেছে।
তিনি বলেন, “আমি জানি জঁ-মারি লে পেন নামের লোকটি কতটা খারাপ ছিল, কিন্তু এখন আমি দেখছি তার দল সম্পূর্ণ বদলে গেছে।”
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সম্মেলনে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া অনেকেই তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফরাসি-ইহুদি দার্শনিক বার্নার্ড হেনরি-লেভি এবং অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের (এডিএল) প্রধান জোনাথন গ্রিনব্লাট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মূল কারণ হলো, ইসরায়েল বর্তমানে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যেকোনো মিত্র খুঁজে নিতে চাইছে। তবে, তাদের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও অনেক বিতর্কের জন্ম দেবে, তা বলাই বাহুল্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন