শিরোনাম: পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য থেকে সার: যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত এবং বাংলাদেশের জন্য এর সম্ভাবনা
আমাদের দেশের শহরগুলোতে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, যেখানে এই বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহার করে কৃষিকাজে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে পয়ঃনিষ্কাশন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়া কঠিন বর্জ্য, যা ‘বায়োসলিড’ নামে পরিচিত, তা কৃষকদের জমির উর্বরতা বাড়াতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্জ্য জল শোধনের প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, বড় আকারের আবর্জনা অপসারণ করা হয়। এরপর, জলকে থিতানো ট্যাংকে পাঠানো হয়, যেখানে ভারী কঠিন পদার্থ নিচে জমা হয়।
এই জমা হওয়া বর্জ্যকে আলাদা করে নেওয়া হয়। এর পরে, জলকে বায়ু মিশ্রিত ট্যাংকে পাঠানো হয়, যেখানে অণুজীবগুলি জৈব পদার্থকে ভেঙে দেয়।
সবশেষে, কঠিন বর্জ্যকে আরও ঘন করে, বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং কৃষিজমিতে প্রয়োগ করার উপযোগী করে তোলা হয়।
তবে, এই প্রক্রিয়ার একটি উদ্বেগের দিক হলো ‘ফরএভার কেমিক্যালস’ বা পিএফএএস-এর উপস্থিতি। এই রাসায়নিকগুলি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং মাটি ও পানিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) এর সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কিছু ক্ষেত্রে, বায়োসলিড প্রয়োগ করা জমিতে পিএফএএস-এর ঝুঁকি বাড়ছে। এই কারণে, বর্জ্যে পিএফএএস-এর পরিমাণ কত, তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রে বায়োসলিড ব্যবহারের কারণ হলো, এতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে, যা মাটির উর্বরতা বাড়াতে এবং সেচের কাজে সহায়তা করে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে, এই বর্জ্যকে শুকিয়ে মাটির মতো করে ব্যবহার করা হয়, যা উদ্যান বা পার্কের মতো স্থানে প্রয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিবেচনা করলে, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমাদের দেশে এখনো এই ধরনের প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ সেভাবে শুরু হয়নি, তবে বায়োসলিড ব্যবস্থাপনার ধারণাটি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য উপকারী হতে পারে।
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্যকে সার হিসেবে ব্যবহার করা গেলে, একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়বে, তেমনি পরিবেশ সুরক্ষাতেও তা সহায়তা করবে।
তবে, এক্ষেত্রে পিএফএএস-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করা এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনা অপরিহার্য। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ, উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে, আমরাও হয়তো একদিন পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারব।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস