যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবের মাঝেও রাশিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ! শান্তি আলোচনায় কি তবে ফাঁদ?

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন হামলা, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রাশিয়ার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জেলেনস্কি।

কয়েক দফা আলোচনার পর কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি এবং জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত বন্ধ করতে রাজি হওয়ার একদিন পরেই ইউক্রেনে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, শান্তি আলোচনার মধ্যেই এমন হামলা রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য প্রমাণ করে।

অন্যদিকে, রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেন রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। ক্রেমলিন অবশ্য জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোড়া ১১৭টি ড্রোন থেকে ৫৬টি ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে হামলাগুলোর মধ্যে ৪৮টি ছিল ভুয়া, যা কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘গতকাল রাতে রাশিয়ার আরও ১১৭টি হামলার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে তারা কীভাবে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনার পরেও এমন ব্যাপক হামলা চালানো প্রমাণ করে, মস্কো কোনো প্রকৃত শান্তি চায় না।’

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন ক্রিমিয়ায় একটি গ্যাস সংরক্ষণাগারে এবং সীমান্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে আঘাত হানতে চেয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘কিয়েভ সরকার রাশিয়ার বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষতি করেই চলেছে, যা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হওয়া সমঝোতাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা।’

সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে হওয়া বৈঠকে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি এবং জ্বালানি স্থাপনায় ৩০ দিনের জন্য হামলা বন্ধের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য হয়। তবে, রাশিয়া জানিয়েছে, খাদ্য ও সারের রপ্তানি সহজ করতে এবং সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমে দেশটির রাষ্ট্রীয় কৃষি ব্যাংক ‘রোজেলখোজব্যাংক’-কে পুনরায় যুক্ত করার নিশ্চয়তা দিলেই তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার এক ব্রিফিংয়ে আলোচনার প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা আমাদের আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলকভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট।’ তিনি আরও যোগ করেন, জ্বালানি বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছিল।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এই মাসের শুরু থেকে জ্বালানি বিষয়ক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন, যদিও পরে তিনি তার এই কথাকে ‘একটু ব্যঙ্গাত্মক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সৌদি আরবে হওয়া আলোচনা থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব এবং চলমান যুদ্ধের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, পুতিন এই মুহূর্তে শান্তি চান কিনা, তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন। বাইডেন বলেন, ‘আমার মনে হয় রাশিয়া এই যুদ্ধের সমাপ্তি দেখতে চায়, তবে তারা হয়তো সময়ক্ষেপণ করছে।’

ইউক্রেনের কৌশল হলো, আলোচনার মাধ্যমে মধ্যবর্তী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবগুলোতে রাজি হয়ে রাশিয়ার ওপর শান্তির দায়িত্ব চাপানো, কারণ কিয়েভ মনে করে, রাশিয়া আরও বেশি শর্ত দেবে।

তবে, রাশিয়া এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কী সুবিধা পাওয়া যায়, সেদিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে, জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *