ইউক্রেনের মারিউপোল শহর রক্ষার সঙ্গে জড়িত দেশটির একটি সামরিক ইউনিটের বেশ কয়েকজন সদস্যকে কারাদণ্ড দিয়েছে রাশিয়ার একটি আদালত। বুধবার ঘোষিত এই রায়ে তাদের ১৩ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার কৌঁসুলি অফিসের বরাত দিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার সহিংস দখলের চেষ্টা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আদালতের এই রায় এমন এক সময়ে এল, যখন ইউক্রেন তাদের জাতীয় নিরাপত্তা দিবস পালন করছে। মারিউপোল শহর এক সময় ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
২০২২ সালে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনীয় সেনা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের আজভস্টাল স্টিল কারখানায় কয়েক সপ্তাহ ধরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক আদালত (Southern District Military Court) এই রায় ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১১ জনের অনুপস্থিতিতে এবং ১২ জনকে সশরীরে আদালতে হাজির করা হয়।
জানা যায়, আটককৃতদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে রাশিয়ার হেফাজতে মারা গেছেন। এছাড়া, কয়েকজনকে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আদালতে বিচারাধীন এই মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন আজভ রেজিমেন্টের সদস্যরা, যারা বর্তমানে ইউক্রেনীয় ন্যাশনাল গার্ডের অংশ। রাশিয়ার অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাশিয়ার সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন।
২০২২ সালে রাশিয়া আজভ রেজিমেন্টকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে।
এই বিচার প্রক্রিয়া ‘২৪ জনের মামলা’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মামলায় ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী ওলেক্সান্ডার ইশচেঙ্কো রাশিয়ার একটি প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন সেন্টারে মারা যান।
ইউক্রেনীয় কমান্ডার সেভিয়াতোস্লাভ পালামারের বরাত দিয়ে জানা যায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘মেমোরিয়াল’ এই অভিযুক্তদের রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা জানিয়েছে, বন্দীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে, যেখানে তাদের খাবার ও চিকিৎসার অভাব ছিল।
তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়েছে।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাশনাল গার্ডের সাহসী সদস্যদের প্রশংসা করেন এবং সকল ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে মুক্ত করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানান।
জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভ বিশেষভাবে মারিউপোলের রক্ষক ও আজভ যোদ্ধাসহ সকল ইউক্রেনীয় যোদ্ধাকে স্মরণ করে, যারা বর্তমানে রাশিয়ার বন্দী হিসেবে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের মুক্ত করতে সব ধরনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন