মেঘের গভীরে: টর্নেডোর শিকারীর সেরা ছবি!

ঝড়-তুফানের দেশে: রিচার্ড শারুমের ক্যামেরায় আমেরিকার অন্য এক রূপ।

প্রকৃতির রুদ্র রূপ আর মানুষের জীবন – এই দুইয়ের মাঝে সংযোগ স্থাপন করে ছবি তোলেন রিচার্ড শারুম। তাঁর ক্যামেরার লেন্স সবসময় খুঁজে ফেরে এমন কিছু, যা হয়তো আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে যায়।

তাঁর “স্পিনা আমেরিকানা” নামের ছবি তোলার প্রকল্প তেমনই এক অনুসন্ধিৎসার ফল। আমেরিকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, লোকমুখে ‘ফ্লাইওভার কান্ট্রি’ নামে পরিচিত একটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন তিনি। এই অঞ্চলের মানুষজন সাধারণত রক্ষণশীল এবং নিজেদের সংস্কৃতিতে অবিচল।

শারুমের এই প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হল একটি ছবি, যেখানে দেখা যায় এক জন ‘স্টর্ম চেজার’ বা ঝড়-অনুসন্ধানকারীকে, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণায়মান মেঘের পটভূমিতে। টর্নেডোর (ঘূর্ণিঝড়) কাছাকাছি আসার অভিজ্ঞতা থেকে ছবিটি তোলা হয়েছিল।

ওকলাহোমার বার্লিংটনে ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী ছিলেন শারুম। একটি শক্তিশালী টর্নেডো তাঁদের খুব কাছ দিয়ে বয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে তাঁরা বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পান।

সেই ঘটনার পর, যখন তাঁরা একটু শান্ত হয়ে চারিদিকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখনই তিনি তাঁর ক্যামেরায় সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি বন্দী করেন। ছবিতে দেখা যায়, ভয়ঙ্কর মেঘের স্তূপের সামনে এক জন মানুষ, যেন প্রকৃতির একনিষ্ঠ যাত্রী।

“স্পিনা আমেরিকানা” প্রকল্পের জন্য শারুম টেক্সাস থেকে শুরু করে ওকলাহোমা, কানসাস, নেব্রাস্কা এবং ডাকোটা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের জীবন ও সংস্কৃতিকে ক্যামেরাবন্দী করা।

এর জন্য তিনি কিছু অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। নগ্নতাবাদী একটি পার্কে গিয়ে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা ক্যামেরাবন্দী করা অথবা মেনোনাইট সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো – এইসব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জীবনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে চেয়েছেন।

শারুম সবসময় চেষ্টা করেছেন, মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের কাছ থেকে তাদের গল্প শোনবার। তিনি মনে করেন, ছবি তোলার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁর কথায়, “নিজের ভেতরের জগৎকে জানতে হলে, বাইরের জগৎকে দেখতে হয়। সবার সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

এই প্রকল্পের মাধ্যমে শারুম আমেরিকার একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জীবন, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির রুদ্র রূপকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন। তাঁর ছবিগুলো কেবল একটি অঞ্চলের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

তাঁর কাজ আমাদের শিখিয়ে যায়, ভিন্নতার মাঝেও কিভাবে মানুষের প্রতি সম্মান জানানো যায় এবং তাদের জীবনকে উপলব্ধি করা যায়।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *