গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন। তাঁর ভাষ্যমতে, ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে, কারণ তারা সেখানকার ‘কিছু দৃশ্য’ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে গোপন করতে চায়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় বোয়েন বলেন, গত ১৮ মাসে তিনি খুব সামান্য সময়ের জন্য, মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে গাজার ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর মতে, সাংবাদিকদের প্রবেশে এই বাধা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো গাজার ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধোঁয়াশা তৈরি করা এবং সেখানকার তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করা।
বোয়েন উল্লেখ করেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল প্রথমে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে যেতে দিয়েছিল। তিনি নিজে সেখানকার কাফার আজা-তে গিয়েছিলেন, যেখানে তখনও লড়াই চলছিল। তাঁর প্রশ্ন, শুরুতে যদি তাদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এখন কেন গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না? বোয়েনের মতে, এর কারণ হলো, ইসরায়েল চায় না সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কোনো খবর প্রকাশ করুক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হতাহতের সংখ্যা নিয়েও কথা বলেন বোয়েন। হামাস নিয়ন্ত্রিত এই মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যকে বর্তমানে উপলব্ধ তথ্যের মধ্যে ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বোয়েনের মতে, যেহেতু বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর পক্ষে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই এই মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বোয়েন বলেন, “আমার মনে হয়, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই যুদ্ধটি সবচেয়ে ভয়াবহ।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি সেখানে (গাজায়) প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো, তবে মানুষজন সবকিছু দেখতে পারতো, কবরগুলো গণনা করতে পারতো, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কঙ্কালগুলো তুলে আনতে পারতো এবং তখন একটা সঠিক ধারণা পাওয়া যেত। কিন্তু যখন দরজা বন্ধ থাকে, তখন এসব বিষয়গুলো খুবই কঠিন হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত বছর জেরেমি বোয়েনসহ প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক, তাঁদের মধ্যে বিবিসির লিস ডসেট এবং মিশাল হুসেইনও ছিলেন, তাঁরা ইসরায়েল ও মিশরের প্রতি গাজায় বিদেশি গণমাধ্যমকে অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, বিবিসির পক্ষ থেকে ‘গাজা: হাউ টু সারভাইভ আ ওয়ারজোন’ (Gaza: How to Survive a Warzone) শিরোনামের একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ নিয়েও তদন্ত চলছে। জানা গেছে, ছবিটির ১৩ বছর বয়সী ভাষ্যকার আবদুল্লাহ আল-ইয়াজোরি ছিলেন হামাস সরকারের কৃষি উপ-মন্ত্রীর ছেলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান