গভীর সমুদ্রের “কুৎসিত” মাছ: আসল চেহারার রহস্য উন্মোচন।
২০১৩ সালে, ‘বিশ্বের কুৎসিত প্রাণী’ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল ব্লবফিশ। ‘আগলি অ্যানিম্যাল প্রিজার্ভেশন সোসাইটি’ নামক একটি সংস্থা এই ভোটের আয়োজন করেছিল, উদ্দেশ্য ছিল অবহেলিত প্রাণীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ব্লবফিশ সেই তালিকার যোগ্য ছিল, কারণ ইন্টারনেটে এর একটি ছবি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পরেছিল, যেখানে মাছটিকে একটি “গলিত” অবস্থায় দেখা গিয়েছিল – এবং সেটি ছিল একটি মৃত ব্লবফিশের ছবি।
কিন্তু সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলায়। সম্প্রতি, ব্লবফিশ ‘নিউজিল্যান্ডের বর্ষসেরা মাছ’ নির্বাচিত হয়েছে, যা জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে।
আসলে, ইন্টারনেটে পরিচিত ‘মি. ব্লবি’ নামের এই মাছটি, গভীর সমুদ্রের ব্লবফিশের আসল চেহারার থেকে বেশ আলাদা। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাঝে প্রশান্ত মহাসাগরে গবেষণা চালানোর সময় এই মাছটির ছবি তোলা হয়।
সমুদ্রের গভীরে, যেখানে ব্লবফিশ বাস করে, সেখানে এটিকে অন্যান্য হাজারো প্রাণীর সঙ্গে একটি জালে বন্দী করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট ক্লাউড স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ম্যাথিউ ডেভিসের মতে, এত গভীরে, শীতল পরিবেশে প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা কঠিন। ব্লবফিশ সাধারণত মহাদেশীয় শেল্ফ থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বিচরণ করে।
গভীর সমুদ্রে বসবাস করার কারণে ব্লবফিশকে সচরাচর দেখা যায় না, তবে অন্যান্য মাছের থেকে এদের কিছু ভিন্নতা রয়েছে। তাদের শরীরে আঁশ থাকে না, বরং থাকে আলগা চামড়া।
সমুদ্রের গভীরের চাপ এই চামড়ার মাধ্যমে তাদের একটি নির্দিষ্ট আকার দেয়। কিন্তু সমুদ্রের বাইরে আসার পরেই তাদের সেই আকার নষ্ট হয়ে যায়।
ব্লবফিশ আসলে দেখতে কেমন?
গভীর সমুদ্র থেকে অনেক উপরে তোলার কারণে অনেক মাছেরই চামড়ার টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘মি. ব্লবি’কে প্রায় ১০০০ থেকে ১৩০০ মিটার গভীরতা থেকে তোলা হয়েছিল।
এই গভীরতা এতটাই ঠান্ডা যে, মাছটিকে দ্রুত উপরে তুললে, অনেকটা যেন “গ্লু” দিয়ে আটকানো কিছু গরম করলে গ্লু গলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়, যেমনটা বলছেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফির মেরিন ভার্টিব্রেট কালেকশন ম্যানেজার বেন ফ্র্যাবেল।
সুতরাং, ব্লবফিশ তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে “গলিত” আইসক্রিমের মতো দেখায় না। পানির নিচে এরা অনেকটা ব্যাঙাচির মতো দেখতে – সামনের দিকটা বড় এবং পেছনের দিকটা ক্রমশ সরু।
ফ্র্যাবেলের মতে, “এদের শরীরের সামনের অংশটা অনেকটা বিশাল মাথার মতো।” খাবার সংগ্রহের জন্য এরা শিকারের অপেক্ষায় থাকে।
যখন কোনো ছোট মাছ বা অমেরুদণ্ডী প্রাণী এদের পাশ দিয়ে যায়, তখন এরা দ্রুত মুখ খুলে চুষে নেয়।
আঁশের বদলে এদের চামড়া থাকার পাশাপাশি আরও কিছু ভিন্নতা রয়েছে। অধিকাংশ মাছের শরীরে গ্যাস ব্লাডার থাকে, যা তাদের পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। কিন্তু ব্লবফিশের তেমন কোনো গ্যাস ব্লাডার নেই।
এর বদলে তাদের শরীরে পেশি ও ভারী কঙ্কালও কম থাকে।
ফ্র্যাবেল বলেন, “এদের হাড়গুলো খুব শক্ত নয়।”
এই ধরনের পরিবর্তন তাদের টিকে থাকার জন্য জরুরি। দ্রুত চলাচলের জন্য তাদের পেশির প্রয়োজন হয় না, কারণ তাদের তেমন কোনো শিকারী নেই।
এছাড়া, তাদের শরীরে একটি বিশেষ টিস্যু স্তর (extracellular matrix) থাকে, যা মূলত জল দিয়ে গঠিত এবং সম্ভবত তাদের কাঠামো ও পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। এরা শক্তি বাঁচানোর জন্য খুব বেশি নড়াচড়া করে না।
ফ্র্যাবেলের ভাষায়, “পৃথিবীর বৃহত্তম আবাসস্থলে” কখন খাবার পাওয়া যাবে, তা তো বলা যায় না!
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক