মঙ্গল গ্রহে অভিযান: নভোচারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি!
মহাকাশ গবেষণার অগ্রযাত্রায় মানুষের মঙ্গল গ্রহে পদার্পণের স্বপ্ন ক্রমশ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে চলেছে। তবে, লাল গ্রহটিতে অভিযানের পথে অপেক্ষা করছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
সেখানকার মাটি ও ধুলোর কণা, যা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হতে পারে, তা নভোচারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলের ধুলোর মধ্যে বিদ্যমান কিছু উপাদান, যেমন – সিলিকা, জিপসাম, পারক্লোরেটস এবং ন্যানোফেজ আয়রন অক্সাইড, নভোচারীদের শরীরে প্রবেশ করলে তাদের জীবনহানির কারণ হতে পারে।
এই সূক্ষ্ম কণাগুলো শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে সেখানে জমা হতে পারে। এর ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মঙ্গলের মাটিতে পাওয়া পারক্লোরেটস থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে এবং শরীরে রক্তের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
নভোচারীরা যদি দীর্ঘদিন ধরে এই ধুলোর সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তাদের শরীরে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে অনেক সময় লাগবে।
তাই, নভোচারীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ধুলো থেকে বাঁচতে উপযুক্ত ফিল্টার ব্যবহার করা, কেবিন পরিষ্কার রাখা এবং ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক রিপালশন ডিভাইস ব্যবহারের মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন এমন বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মঙ্গলে অভিযান অসম্ভব নয়, তবে নভোচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মহাকাশযান, যন্ত্রপাতি এবং সৌর প্যানেলের ওপর এই ধুলোর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সৌর প্যানেলে ধুলো জমলে তা ব্যাটারি চার্জ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে অভিযান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের ধুলোর কণাগুলো অনেক বেশি ধারালো এবং সূক্ষ্ম।
এই কারণে শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় তা ফুসফুসের কোমল টিস্যুগুলোর ক্ষতি করতে পারে। এই পরিস্থিতি অনেকটা অ্যাসবস্টসের (asbestos) সংস্পর্শে আসার মতো, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নভোচারীদের সুরক্ষার জন্য চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান—এই তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে একটি কার্যকরী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
মহাকাশ সংস্থাগুলো বলছে, মঙ্গল গ্রহে অভিযান শুরুর আগে নভোচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানগুলোতে নভোচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে, আমরা আশা করতে পারি, একদিন মানুষ নিরাপদে মঙ্গল গ্রহে পা রাখবে এবং এই লাল গ্রহের রহস্য উন্মোচন করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন