বড় বাজেটের গেমে ভাটা! ছোট আকারের গেমসের জয়জয়কার?

ভিডিও গেমের জগতে বিশাল পরিবর্তন আসছে। বিশাল বাজেট এবং সীমাহীন বিস্তৃতির গেমের বদলে এখন নির্মাতারা ঝুঁকছেন ছোট, সুসংহত অভিজ্ঞতার দিকে। এর কারণ কি? খরচ এবং বাজারের চাহিদা।

খেলা তৈরির খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বাজারে গেমের ছড়াছড়ি।

একসময় ‘শেনমু’ (Shenmue) বা ‘ড্রাইভার’-এর (Driver) মতো গেমগুলো খেলোয়াড়দের জন্য ছোট শহর তৈরি করত, যেখানে তারা ঘুরে বেড়াতে পারত। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই ধারণা বদলে যায়।

‘লিজেণ্ড অফ জেল্ডা: ব্রেথ অফ দ্য ওয়াইল্ড’ (Legend of Zelda: Breath of the Wild), ‘এলেন রিং’ (Elden Ring) বা ‘ডেথ স্ট্র্যান্ডিং’-এর (Death Stranding) মতো গেমে বিশাল জগৎ তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি ‘মাইনক্রাফট’-এর (Minecraft) জগৎ প্রায় ৬0,000 বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

‘এলাইট ডেঞ্জারাস’ (Elite Dangerous) এবং ‘নো ম্যানস স্কাই’-এর (No Man’s Sky) মতো গেমগুলোতে তো পুরো গ্যালাক্সিই রয়েছে!

কিন্তু এই বিশাল জগৎ তৈরি করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, গেম বানানোর খরচ বাড়ছে, বিশেষ করে গ্র্যান্ড থেফট অটো ৬ (Grand Theft Auto 6)-এর মতো গেম তৈরি করতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।

এছাড়াও, বাজারে এমন গেমের সংখ্যা বাড়ছে, যা খেলোয়াড়দের শত শত ঘণ্টা খেলার সুযোগ দেয়। প্রশ্ন হলো, এত গেম খেলার জন্য প্রস্তুত খেলোয়াড় কি সবসময় পাওয়া যাবে?

বিশেষ করে এখন যখন গেম নির্মাতারা নিয়মিত নতুন পোশাক, মিশন এবং স্থান যোগ করে খেলোয়াড়দের ধরে রাখার চেষ্টা করছেন?

তাই এখন অনেক বড় স্টুডিও তাদের গেমের ডিজাইন নতুন করে সাজাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘এভয়েড’ (Avowed) গেমটি তৈরি করেছে অবসিডিয়ান এন্টারটেইনমেন্ট (Obsidian Entertainment)।

এখানে বিশাল উন্মুক্ত বিশ্বের পরিবর্তে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত একটি জগৎ তৈরি করা হয়েছে, যা গল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে খুলতে থাকে।

গেমটির কাহিনীকার কেট ডলারহাইডের মতে, এর মূল কারণ হলো খেলোয়াড়দের পছন্দ অনুযায়ী গল্প বলার সুযোগ দেওয়া।

ওপেন-ওয়ার্ল্ড গেমগুলোতে গতির বিষয়টি বেশ কঠিন। কারণ, খেলোয়াড় কখন কি করছে, তা জানা যায় না। তাই, ধারাবাহিকভাবে অঞ্চল তৈরি করার ফলে আমরা সবসময় জানি, তারা গল্পের কোন অংশে আছে।

কেট ডলারহাইড

সহজ কথায়, খেলোয়াড় যেখানে খুশি সেখানে ঘোরাঘুরি করার স্বাধীনতা হারালেও, নির্মাতারা গল্পের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ পান। এই ধরনের কাঠামো খেলোয়াড়দের খেলার অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে এবং গেমটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

আরেকটি উদাহরণ হলো ‘অ্যাটমফল’ (Atomfall)। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি, যেখানে খেলোয়াড়কে একটি বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হয়।

এখানেও, কয়েকটি প্রধান স্থানে বিভক্ত একটি জগৎ রয়েছে, যেখানে খেলোয়াড়রা ঘুরে বেড়াতে পারে।

এই স্থানগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট হওয়ায়, খেলোয়াড়রা সবসময় নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার সুযোগ পায়।

এই বিষয়গুলো আমাকে গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘ড্রাগন’স ডোগমা ২’ (Dragon’s Dogma 2)-এর কথা মনে করিয়ে দেয়।

গেমটিতে দ্রুত ভ্রমণের সুযোগ সীমিত ছিল, যার ফলে প্রতিটি অনুসন্ধান আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

ভবিষ্যতে গ্র্যান্ড থেফট অটো ৬-এর (Grand Theft Auto 6) মতো গেমগুলো বাজারে আসলে নির্মাতারা কি কৌশল নিবেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

হয়তো তারা ছোট এবং আরও বিস্তারিত জগৎ তৈরি করতে উৎসাহিত হবে।

ছোট আকারের গেমও যে দারুণ হতে পারে, তার প্রমাণ হলো ‘অ্যাস্ট্রো বোট’ (Astro Bot)। এই গেমের পরিচালক নিকোলাস ডাউসেট (Nicolas Doucet) গেম ডেভেলপার কনফারেন্সে (Game Developers Conference) বলেছিলেন,

শুরু থেকেই আমরা একটি ছোট আকারের গেম বানানোর কথা ভেবেছি এবং আমার মনে হয়, বিশেষ করে এই বছরে, ছোট গেম তৈরি করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

নিকোলাস ডাউসেট

ভিডিও গেমের এই পরিবর্তন গেমিং জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যেখানে নির্মাতারা খেলোয়াড়দের জন্য আরও গভীর এবং অর্থবহ অভিজ্ঞতা তৈরি করতে পারবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *