গরমের দুপুরে যখন গাড়ির ভেতরে ঢুকি, তখন প্রথমেই জানালার কাঁচগুলো নামিয়ে দিই, তাই না? গাছেরও কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা দরকার হয়।
বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছেই নতুন লাগতে পারে, কিন্তু গাছেরা কীভাবে শ্বাস নেয়, সেই প্রক্রিয়াটাও বেশ আকর্ষণীয়।
আমরা জানি, গাছের পাতাগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যেগুলোকে স্টোমাটা (Stomata) বা পত্ররন্ধ্র বলা হয়। এই ছিদ্রগুলো খোলা ও বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে, যা সালোকসংশ্লেষণ (Photosynthesis) প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি।
তবে গাছ শুধু পাতার মাধ্যমেই শ্বাস নেয় না। মানুষের মতো, তাদেরও শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চলে, যেখানে তারা অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। এই শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া গাছের সব জীবিত কোষে ঘটে, শুধু পাতায় নয়।
তাহলে প্রশ্ন হলো, কাণ্ড এবং শাখা-প্রশাখায়, যেখানে স্টোমাটা নেই, সেখানে কীভাবে গ্যাস আদান-প্রদান হয়?
আসলে, গাছের বাকল বা ছাল হলো তাদের বাইরের আবরণ, যা পোকামাকড় ও রোগ থেকে ভেতরের অংশকে রক্ষা করে। এই বাকলের মধ্যেই রয়েছে বিশেষ কিছু ছিদ্র, যাদের বলা হয় লেন্টিসেল (Lenticels)।
লেন্টিসেলগুলো দেখতে সরু, ছোট ছোট রেখার মতো, যা গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো অনেকটা জানালার মতো কাজ করে, যার মাধ্যমে ভেতরের জীবিত কোষ এবং বাইরের বাতাসের মধ্যে গ্যাস চলাচল করতে পারে।
সাধারণত, লেন্টিসেলের আকার দেখে গাছের প্রজাতি শনাক্ত করতে পারেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের আশেপাশে হয়তো এমন অনেক গাছ আছে যাদের বাকলে লেন্টিসেল দেখা যায়।
কোনো কোনো গাছে যেমন—চেরি বা বার্চ গাছের বাকলে সুস্পষ্ট লেন্টিসেল থাকে, আবার কিছু গাছে এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। লেন্টিসেলগুলো গাছের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ এগুলো গাছকে গরম আবহাওয়ায়ও বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
গাছের এই শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছেরা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে, যা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য অপরিহার্য।
তাই গাছ শুধু আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং আমাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও সরবরাহ করে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক