দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানল: জলবায়ু পরিবর্তনের চরম রূপ, বাস্তুহারা হাজার হাজার মানুষ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন। দেশটির উত্তর গ্যেংসাং প্রদেশে দাবানলের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে ইতিমধ্যে অন্তত ২৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বহু মানুষ, ধ্বংস হয়ে গেছে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
দেশটির দুর্যোগ ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান লি হান-কিউং এই দাবানলকে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি চরম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আগে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।”
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবানলের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টরের বেশি বনভূমি পুড়ে গেছে, যা দেশটির ইতিহাসে কোনো একক বনভূমি অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া উষ্ণতার দিক থেকে রেকর্ড গড়েছিল। সে সময় গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
দেশটির অনেক অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে, ফলে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দাবানলের কারণে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম, হাওই গ্রাম এবং বাইয়ংসান কনফুসিয়ান অ্যাকাডেমি হুমকির মুখে পড়েছে।
এছাড়া, গোউনসা মন্দির কমপ্লেক্সের প্রায় ২০টি কাঠামো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত একটি প্যাভিলিয়ন এবং ১৯০৪ সালে নির্মিত একটি কাঠামোও রয়েছে।
দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে তীব্র বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডক-সু এক সরকারি বৈঠকে বলেছেন, “অভূতপূর্ব দ্রুততায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় আমরা জাতীয়ভাবে একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাবানলের বিস্তার অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে দাবানলের ঘটনা আরও বাড়বে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ্যার অধ্যাপক ইয়ে সাং-উক বলেছেন, “বৃষ্টিপাতের অভাবের কারণে ভূমি শুকিয়ে যাওয়ায় দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা শুধু জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করতে পারি না, তবে এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে।”
দক্ষিণ কোরিয়ার এই দাবানল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের একটি বাস্তব উদাহরণ।
এর থেকে বোঝা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে। একই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে, যা আমাদের জন্য একটি অশনি সংকেত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান