কানাডার আসন্ন নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে ভারত। দেশটির নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে অন্যান্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে নয়াদিল্লীর বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
কানাডার নিরাপত্তা সংস্থা আশঙ্কা করছে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে এবং প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে সুপরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হতে পারে।
কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা এবং নির্বাচন নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, শুধু ভারতই নয়, চীন, পাকিস্তান এবং ইরানও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করতে পারে।
এসব দেশ সম্ভবত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই ব্যবহার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
কানাডার গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এর আগে, বিদেশি হস্তক্ষেপের একটি তদন্তে তথ্য বিকৃতিকে গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি শক্তিগুলো তাদের অপতৎপরতা আরও গোপন করতে কৌশল পরিবর্তন করেছে, যা শনাক্ত করা কঠিন করে তুলছে।
অভিযোগ উঠেছে, চীনের পক্ষ থেকে দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের নেতৃত্বকে টার্গেট করা হয়েছিল।
উইচ্যাট-এর মাধ্যমে চালানো এই অপপ্রচার প্রায় ৩০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে। এছাড়া, ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ চন্দ্র আর্যর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের কারণে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, আর্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন।
এদিকে, বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভারের ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ের পেছনেও ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে।
যদিও পয়েলিভারের দাবি, তিনি কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের শিকার হননি এবং স্বচ্ছভাবে জয়লাভ করেছেন। তবে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্রের অভাবে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা পয়েলিভারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি হস্তক্ষেপের এই অভিযোগগুলো কানাডার নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ।
কারণ, এর ফলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন এবং নির্বাচনের ফল প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়েও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অতীতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর মালিক এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেও ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
কানাডার প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির খবর তাদের কাছে নেই।
কানাডার এই নির্বাচন বিষয়ক ঘটনাপ্রবাহ গণতন্ত্রের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুসংহত রাখতে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের যেকোনো অপচেষ্টা রুখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান