ছোট্ট দ্বীপ বেকুয়া: সমুদ্র সৈকত, বার আর ৩০ মিনিটের ভ্রমণ!

ছোট্ট একটি ক্যারিবীয় দ্বীপ, যেখানে অনাবিল সমুদ্র সৈকত আর শান্ত জীবন: বেকুইয়া।

আজকের ভ্রমণ বিষয়ক নিবন্ধে আমরা কথা বলব ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি লুকানো রত্ন, বেকুইয়া (Bequia) নিয়ে। যারা কোলাহলমুক্ত, শান্ত ও প্রকৃতির কাছাকাছি ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য বেকুইয়া হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।

সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন দ্বীপপুঞ্জের অংশ এই বেকুইয়া, যা তার অপরূপ সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।

কেন বেকুইয়া?

বেকুইয়া তার শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানে কোলাহল নেই, আছে নির্মল সমুদ্র সৈকত আর সবুজ পাহাড়ের সারি।

যারা ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ জায়গা। এখানকার “আন্ডারস্টেটেড লাক্সারি” বা “নিরিবিলি বিলাসিতা” পর্যটকদের কাছে অন্যরকম আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

এখানে বিলাসবহুল রিসোর্টগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে।

কিভাবে যাবেন?

বাংলাদেশ থেকে বেকুইয়া যাওয়ার সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। সাধারণত, আপনাকে কয়েকটি রুটে ভ্রমণ করতে হবে।

প্রথমে, ঢাকা থেকে হয় লন্ডন, প্যারিস অথবা অন্য কোনো ইউরোপীয় শহরে যেতে পারেন। এরপর, সেই শহর থেকে সেন্ট ভিনসেন্টের আরগাইল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (SVD) যেতে হবে।

সেখান থেকে ফেরি অথবা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বেকুইয়ায় যাওয়া যেতে পারে। সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে বেকুইয়ার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ফেরি চলাচল করে, যা ভ্রমণকে আরও সহজ করে তোলে।

কোথায় থাকবেন?

বেকুইয়াতে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরণের বিকল্প রয়েছে। বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে ভিলা বা গেস্ট হাউজ—সব ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা এখানে বিদ্যমান।

  • বেকুইয়া বিচ হোটেল (Bequia Beach Hotel): এই হোটেলে রয়েছে নিজস্ব ৩৫-মিটারের ইয়ট, যা ব্যক্তিগত নৌ-ভ্রমণের জন্য ভাড়া করা যায়।
  • দ্য লুকআউট (The Lookout): পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই ভিলা থেকে আপনি চারপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন.
  • দ্য লাইমিং বেকুইয়া (The Liming Bequia): এই রিসোর্টটি শান্ত সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। এখানে আরামদায়ক ভিলা ও স্যুটগুলোতে থেকে আপনি প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করতে পারবেন.
  • বেকুইয়া প্ল্যান্টেশন হোটেল (Bequia Plantation Hotel): এটি শহরের কাছে অবস্থিত হলেও, এর সবুজ বাগান এটিকে একটি শান্ত পরিবেশ দেয়।

ঘুরার মতো স্থান

বেকুইয়ায় সমুদ্র সৈকত, ঐতিহাসিক স্থান এবং বিভিন্ন ধরণের আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।

  • প্রিন্সেস মার্গারেট বিচ (Princess Margaret Beach) ও লোয়ার বে বিচ (Lower Bay Beach): এখানকার স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটা বা সমুদ্রের ধারে বিশ্রাম নেওয়ার মজাই আলাদা.
  • ফ্রেন্ডশিপ বে বিচ (Friendship Bay Beach): এই সৈকতটি শান্ত ও সুন্দর একটি স্থান.
  • সেন্ট্রাল বিচ (Central Beach): যারা নির্জনতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ.
  • ফ্রেন্ডশিপ রোজ (Friendship Rose): এই ঐতিহ্যবাহী ক্যারিবিয়ান স্কুনারে চড়ে আপনি টোবাগো কেইস ও মুস্তিকের মতো দ্বীপগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন.
  • ডাইভ বেকুইয়া (Dive Bequia): যারা সমুদ্রের গভীরে ডুব দিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই জায়গাটি উপযুক্ত। এখানে স্কুবা ডাইভিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে.
  • বেকুইয়া হেরিটেজ মিউজিয়াম (Bequia Heritage Museum): এই জাদুঘরে দ্বীপের আদিবাসী ইতিহাস এবং নৌ-নির্মাণ ও তিমি শিকারের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়.
  • মাউন্ট পেগি (Mount Peggy): পাহাড়ের উপরে উঠে আপনি বেকুইয়ার চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন.
  • ফোর্ট হ্যামিলটনের ধ্বংসাবশেষ (Fort Hamilton): এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোও পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়।

খাবার ও পানীয়

বেকুইয়ার রেস্টুরেন্টগুলোতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।

  • জ্যাক’স বিচ বার (Jack’s Beach Bar): এখানে আপনি তাজা খাবার ও ককটেল উপভোগ করতে পারবেন.
  • ম্যাক’স পিৎজা ও কিচেন (Mac’s Pizza & Kitchen): এই রেস্টুরেন্টটি লবস্টার পিৎজার জন্য সুপরিচিত.
  • প্রভিশন (Provision): এখানে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়.
  • লরা’স (Laura’s): এখানকার সানসেট ভিউ ও স্থানীয় খাবার অনেক পর্যটকের পছন্দ.
  • বার ওয়ান (Bar One): অ্যাডমিরালিটি বে-তে অবস্থিত এই ভাসমান বারে ককটেল ও পানীয় উপভোগ করা যেতে পারে.
  • ককটেল ল্যাব (The Cocktail Lab): এখানে বিভিন্ন ধরনের ককটেল পাওয়া যায়।

কখন যাবেন?

নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেকুইয়া ভ্রমণের সেরা সময়। এই সময়ে আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে।

মে ও জুন মাসেও ভ্রমণ করা যেতে পারে। তবে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে বৃষ্টি বেশি হয়, তাই এই সময় ভ্রমণ করাটা উপযুক্ত নাও হতে পারে।

ভিসা ও অন্যান্য বিষয়

ভিসা এবং ভ্রমণের অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য, ভ্রমণের আগে অবশ্যই আপনার ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।

উপসংহার

যারা প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত ও সুন্দর পরিবেশে ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য বেকুইয়া একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে নিস্তব্ধতা, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে নানা ধরণের আকর্ষণ।

তাই, পরবর্তী ছুটিতে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বেকুইয়াকে বেছে নিতে পারেন।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *