২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আশা ডিগ্রীর রহস্য, ডিএনএ এবং টেক্সট মেসেজ কি সমাধান দেবে?

আশা ডিগ্রীর অন্তর্ধান: ২৫ বছর পরও রহস্যে মোড়া এক মার্কিন কন্যার গল্প।

আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে, ১৯৯৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি, উত্তর ক্যারোলিনার শেলি-তে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আজও আমেরিকার মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ৯ বছর বয়সী এক ফুটফুটে শিশু, আশা ডিগ্রী, হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়, আর সেই ঘটনার জট আজও খোলেনি।

রহস্যে মোড়া এই ঘটনায়, তদন্তকারীরা এখনো পর্যন্ত জানতে পারেননি কেন এবং কিভাবে আশা ঘর ছেড়েছিল।

আশার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সে ছিল খুবই শান্ত ও মিশুক স্বভাবের একটি মেয়ে। পড়াশোনা ও বাস্কেটবল খেলতে ভালোবাসত সে।

ঘটনার রাতে, প্রবল ঝড় উঠলে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সেও টিভি দেখতে বসেছিল। এরপর সে তার ঘরে ফিরে যায়, কিন্তু ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আশার মা, ইকুয়েলা ডিগ্রী, ঘটনার পর জানিয়েছিলেন, তিনি সকালে মেয়েকে বিছানায় খুঁজে পাননি। আশেপাশে খোঁজাখুঁজির পরও যখন তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি, তখন তারা ৯১১-এ ফোন করেন।

এরপরই যেন পুরো শহরজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা, সবাই এসে যোগ দেন শিশুটির খোঁজে।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, সবাই হতাশ হয়ে পড়েছিল।

তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ঘটনার দিন ভোর ৪টার দিকে হাইওয়েতে আশা’র মতো দেখতে একটি মেয়েকে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল।

এরপর ২০০১ সালে, ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর, আশার একটি ব্যাগ পাওয়া যায়, যা তার বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে ফেলা ছিল। ব্যাগের ভেতর থেকে একটি টি-শার্ট উদ্ধার করা হয়, যেটি আসলে আশার ছিল না।

বছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে, তদন্তের অগ্রগতি থমকে যায়। বিভিন্ন সময়ে, আশার ছবিসহ পোস্টার লাগানো হয়, এমনকি তার সন্ধান পেতে সাহায্যকারীর জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও করা হয়েছিল।

২০১৫ সালে, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং স্থানীয় পুলিশ পুনরায় এই মামলার তদন্ত শুরু করে।

সম্প্রতি, এই মামলার তদন্তে নতুন মোড় আসে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী রয় লী ডেডমনের যোগ থাকতে পারে।

ডেডমনের পরিবারের কয়েকজনের ডিএনএ পরীক্ষার পর, একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যায়। জানা যায়, ডেডমনের পরিবারের এক সদস্যের ডিএনএ-র সঙ্গে, আশার ব্যাগের ভেতর থেকে পাওয়া একটি পোশাকের ডিএনএ’র মিল রয়েছে।

আশার অন্তর্ধানের সময় ডেডমনের পরিবারের সদস্যরাও আলোচনায় আসেন। ডেডমনের তিন মেয়ের মধ্যে একজন, লিজী ডেডমনকে নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়ে।

জানা যায়, লিজী নাকি একবার মদ্যপ অবস্থায় স্বীকার করেছিলেন যে, ‘আমি আশা’কে মেরে ফেলেছি’। যদিও এই কথার সত্যতা এখনো প্রমাণ হয়নি।

আশার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ডেডমন পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া কিছু জিনিসপত্রও মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে, একটি সবুজ রঙের গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়, যা ঘটনার সময় হাইওয়েতে দেখা গিয়েছিল বলে জানা যায়।

আশার মা, ইকুয়েলা ডিগ্রী, এখনো বিশ্বাস করেন তার মেয়ে জীবিত আছে।

তিনি বলেন, ‘আমার এখনো আশা আছে। যতক্ষণ না কেউ আমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারবে, আমি এই বিশ্বাস নিয়েই বাঁচব।’

আশার এই অন্তর্ধানের ঘটনা, আমেরিকার সমাজে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার দীর্ঘ ২৫ বছর পরও, সবাই এখনো জানতে চায়, কি হয়েছিল ছোট্ট আশা’র সঙ্গে? উত্তর ক্যারোলিনার এই ঘটনা, শুধু একটি পরিবারের একার নয়, বরং গোটা সমাজের গভীর ক্ষত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *