শিরোনাম: অ্যাপেলের এআই ব্যর্থ নয়, বরং এআই নিজেই যেন এক ব্যর্থতা।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বাজারে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence বা এআই) জয়জয়কার। প্রায় সব বড় প্রযুক্তি কোম্পানিই তাদের পণ্যে এআই যুক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
অ্যাপেলও (Apple) এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সম্প্রতি তাদের এআই বিষয়ক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অনেকের মতে, অ্যাপেলের এআই সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। তবে আসল সত্যিটা হয়তো অন্য কিছু।
আসলে, অ্যাপেলের সমস্যা নয়, বরং এআইয়ের সীমাবদ্ধতাই এখানে মূল বিষয়। বর্তমানে এআই প্রযুক্তি এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যা গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
টেক দুনিয়ায় কান পাতলে শোনা যায়, বিনিয়োগকারীরা চাইছেন কোম্পানিগুলো দ্রুত এআই প্রযুক্তি তাদের পণ্যে যুক্ত করুক। শেয়ারহোল্ডারদের খুশি করতে গিয়ে অনেক সময় কোম্পানিগুলো এমন কিছু করে ফেলে যা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
অ্যাপেলের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে।
অ্যাপেল বরাবরই তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ এবং নির্ভরযোগ্য পণ্য তৈরি করতে পরিচিত। তাদের তৈরি করা আইফোন, এয়ারপড, অ্যাপেল ওয়াচ—এগুলো ব্যবহার করা খুবই সহজ।
এমনকি প্রযুক্তি সম্পর্কে বেশি ধারণা নেই এমন মানুষও সহজে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপেলের এই সুনামের কারণ হলো তারা তাদের পণ্যের ডিজাইন এবং ব্যবহারযোগ্যতার দিকে বিশেষ নজর দেয়।
তাদের তৈরি করা প্রতিটি পণ্যের ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সহজবোধ্য হয়।
কিন্তু এআইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বর্তমানে উন্নতমানের এআই প্রযুক্তি তৈরি করা এখনো কঠিন।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন, আপনি আপনার মাকে বিমানবন্দর থেকে আনতে যাচ্ছেন। আপনি যদি সিরিকে (Siri) জিজ্ঞাসা করেন, ‘মা’র ফ্লাইট কখন ল্যান্ড করবে?’
এবং সিরি যদি সঠিক তথ্য দিতে না পারে, তাহলে এতে আপনার কোনো উপকার হবে না। কারণ, সামান্য ভুলের কারণেও অনেক বড় সমস্যা হতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক কেভিন রুজ মনে করেন, অ্যাপেল এআইয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
তাঁর মতে, অ্যাপেলকে আরও বেশি ঝুঁকি নিয়ে তাদের পণ্যে এআই যুক্ত করতে হবে।
রুজ এই যুক্তির সঙ্গে অনেকেই একমত নন। কারণ, ব্যবহারকারীরা এমন একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি চায় যা তাদের জীবনকে সহজ করবে, কিন্তু ভুল তথ্য দেবে না।
গুগল (Google) বা অ্যামাজনও (Amazon) এখনো পর্যন্ত এআইয়ের এমন কোনো ব্যবহার তৈরি করতে পারেনি যা ব্যবহারকারীদের মন জয় করতে পারে।
তাই, এখন পর্যন্ত এআই প্রযুক্তি গবেষণা এবং উন্নয়নের পর্যায়েই রয়েছে।
যদিও ওপেনএআইয়ের (OpenAI) চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এবং অ্যানথ্রোপিকের (Anthropic) ক্লডের (Claude) মতো কিছু উদ্ভাবন এরই মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তবে ব্যবহারকারীদের জন্য এখনো নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে এগুলো নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি।
মূল কথা হলো, অ্যাপেল এখানে পিছিয়ে নেই।
বরং, এআই প্রযুক্তি এখনো তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
তাই, অ্যাপেলের এআই নিয়ে সমালোচনার আগে, আমাদের এআইয়ের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন