“সারভাইভার”-এর মঞ্চে এক মানবিক দৃশ্য, প্রতিযোগীতার ঊর্ধ্বে বন্ধুত্বের জয়।
সম্প্রতি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “সারভাইভার”-এর একটি পর্বে এমন এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে, যা দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। কঠিন এক প্রতিযোগিতার পরে, যখন সবাই জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল, সেই সময়েই এক প্রতিযোগী, ইভা, যিনি অটিজমে আক্রান্ত, কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন।
তার এই মানসিক অবস্থায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন আরেক প্রতিযোগী জো। এই দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জেফ প্রোbst।
প্রতিযোগিতার শুরুতে ইভা জো-কে জানিয়েছিলেন, তিনি অটিজমের শিকার এবং প্রতিযোগিতার সময় তার সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে, কোনো কারণে অতিরিক্ত উত্তেজনা হলে, তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।
সেই সময়টাতে কিভাবে সাহায্য করতে হবে, সে বিষয়েও তিনি জো-কে বুঝিয়েছিলেন। ইভা জো-কে বলেছিলেন, “যদি দেখো আমি হাত নাড়াচাড়া করছি বা নিজেকে চেপে ধরছি, তাহলে বুঝবে আমি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।” জো তখন ইভার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার ওই কঠিন মুহূর্তে জো এগিয়ে আসেন ইভার দিকে। ইভার অস্থিরতা দেখে তিনি এগিয়ে এসে তাকে শান্ত করেন।
জেফ প্রোbst এই দৃশ্য দেখে জো-কে ইভাকে জড়িয়ে ধরার প্রস্তাব দেন। এরপর জো, ইভার হাত ধরে তাকে সাহস জোগান এবং শান্ত হতে সাহায্য করেন। ইভা তখন বলেন, “ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।” জো তখন ইভাকে বলেন, “তুমি এখন নিরাপদ।”
ইভার এই মানসিক অবস্থার কথা শুনে অনেকেই হয়তো অবাক হয়েছেন। কারণ, সাধারণত এমন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে নিজেদের দুর্বলতাগুলো গোপন করার প্রবণতা দেখা যায়।
কিন্তু ইভা, অন্যদের কাছে বিষয়টি গোপন করেননি। তিনি জানান, ছোটবেলায় তার অটিজম ধরা পড়েছিল এবং চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তিনি হয়তো স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবেন না।
কিন্তু বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা এবং নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সব বাধা অতিক্রম করেছেন। তিনি আরও বলেন, “অটিজম আমার সাফল্যের পথে বাধা নয়, বরং এটি আমার জীবনের একটি অংশ। এতে ভয়ের কিছু নেই।”
এই ঘটনার পরে, জো-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি সবসময় আমার সন্তানদের জন্য একজন ভালো মানুষ হতে চাই। আমি চাই, তারা যেন অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
আমি চাইতাম, আমার মেয়ের সঙ্গেও যদি কেউ এমন আচরণ করত।” জো-এর এই উত্তরে জেফ প্রোbst এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন যে, তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
তিনি বলেন, “আমিও একজন বাবা। এই ধরনের দৃশ্য আমার হৃদয়ে গভীর দাগ কাটে।”
এই ঘটনা প্রমাণ করে, “সারভাইভার”-এর মতো কঠিন প্রতিযোগিতাতেও মানবিকতা ও বন্ধুত্বের জয় হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই আসল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন