শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত মাছ ধরায় হুমকির মুখে ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী মাছের সস।
ভিয়েতনামের উপকূলীয় একটি ঐতিহ্য, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে, তা হলো মাছের সস তৈরি। এই সস, যা ‘নুওক মাম’ নামে পরিচিত, ভিয়েতনামের খাদ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে এই ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে।
দা নাং-এর কাছে নাম ও গ্রামের বাসিন্দা বুই ভ্যান ফু-র পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এই সস তৈরি করে আসছে। ফু-এর মতে, “এটি শুধু মাছের সসের গুণগত মান নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক মূল্যও।” কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেওয়ায়, এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, অতিরিক্ত মাছ ধরাও একটি বড় সমস্যা।
ছোট আকারের মাছ, যেমন— অ্যাঙ্কোভিস, এই সস তৈরির প্রধান উপাদান। এই মাছগুলো উপকূলের কাছাকাছি পুষ্টিসমৃদ্ধ পানিতে বাস করে। কিন্তু সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। জার্মানির খ্রিস্টান-আলব্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ রেনাতো সালভাত্তেচি বলেছেন, “আমরা যদি অক্সিজেনের এই অভাব অব্যাহত রাখি, তাহলে অ্যাঙ্কোভিসের জন্য তা ভালো হবে না। প্রত্যেক প্রজাতির একটি সীমা আছে।”
শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, অতিরিক্ত মাছ ধরাও একটি উদ্বেগের কারণ। দক্ষিণ চীন সাগরে, যেখানে বিশ্বের প্রায় ১২ শতাংশ মাছ ধরা হয়, সেখানে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বড় জাল ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশ থেকে মাছ ধরার কারণে অনেক মাছ মারা যাচ্ছে। এমনকি বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, যদি তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়ে এবং মাছ ধরা কমানো না হয়, তাহলে দক্ষিণ চীন সাগরের মাছের মজুদের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি হ্রাস পাবে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, তাপমাত্রা ৪.৩ ডিগ্রি বাড়লে প্রায় সব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, ফু-এর মতো সস প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাঙ্কোভিস সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজারে মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে চাইছেন। যদিও ভিয়েতনাম সরকার মাছের সসের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, যা ২০২৩ সালে প্রায় ১৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০৩২ সাল নাগাদ ২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম মাছের সস রপ্তানিকারক দেশ।
মাছের সস ভিয়েতনামের সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত। ফু মনে করেন, এই সস শুধু রান্নার উপকরণ নয়, এটি তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ, যা রক্ষা করা উচিত। তিনি চান, তাঁর ছেলেও যেন এই ঐতিহ্য ধরে রাখে। তবে তা নির্ভর করছে, সাগরে পর্যাপ্ত অ্যাঙ্কোভিস মাছ টিকে থাকে কিনা তার উপর।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই বিষয়টির দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে মৎস্য সম্পদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে, ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়া একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। ভিয়েতনামের মতো, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদেরও টেকসই উপায়ে মাছ ধরার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে ঐতিহ্য ও জীবিকা দুটোই রক্ষা করা যায়।
তথ্য সূত্র: