শিরোনাম: জলবায়ু তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক, বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-র তহবিল ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিতর্ক চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি) আটকে দেওয়া হয়েছে।
সাবেক কর্মকর্তারা এই তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন, যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এই ঘটনা একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।
জানা যায়, এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ছোট ছোট অলাভজনক ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে দেওয়ার কথা ছিল, যারা শক্তি সাশ্রয় এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করে। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন এবং পুরনো রেফ্রিজারেশন সিস্টেম উন্নত করার মতো কাজগুলো করার পরিকল্পনা ছিল, যা ব্যবসার খরচ কমিয়ে গ্রাহকদের সুবিধা দিত।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, এই তহবিল আটকে দেওয়া হয়।
তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে তৎকালীন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রধান লি জেলডিন, আগের প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, এই তহবিল ‘বেআইনিভাবে’ কিছু প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়েছে।
তার মতে, এটি ছিল ‘অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি’। তবে, এই অভিযোগের বিপরীতে অনেকেই বলছেন, এই তহবিলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ ছিল।
এই বিতর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেইসব সংস্থা, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজ করতে চান। ইন্ডিয়ানা এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স ফান্ড-এর নির্বাহী পরিচালক অ্যালেক্স ক্রাউলি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই।
আমাদের লক্ষ্য হলো, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করা এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি রিপাবলিকান-শাসিত রাজ্যগুলোতেও, এই ধরনের অলাভজনক সংস্থাগুলো জলবায়ু তহবিলের গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী। এই সংস্থাগুলো সরকারি ও বেসরকারি অর্থ ব্যবহার করে পরিচ্ছন্ন শক্তি, জ্বালানি সাশ্রয় এবং ভবন সংস্কারের মতো প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প আদতে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমান হতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হতো। উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়াতে এই তহবিল ব্যবহার করে গির্জার ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য কমিউনিটি ভবনগুলোকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ছিল।
উত্তর ক্যারোলিনাতে ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন হেলেনের ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি মেরামত ও সৌর প্যানেল স্থাপনে এই অর্থ ব্যবহারের কথা ছিল।
এই ঘটনার ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তহবিল ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সেখানে এ ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।
জলবায়ু প্রকল্পের অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। একইসাথে, প্রকল্পগুলোর যথাযথ তদারকি ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে অর্থের অপব্যবহার রোধ করা যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
মোটকথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিতর্ক শুধু একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এর মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের জটিলতা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন