চাকরি বাজার ‘বরফ’: ডগ কর্মীদের কপালে কি দু:খ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজারে দেখা যাচ্ছে এক ধরনের স্থবিরতা, যা মূলত কিছু বিশেষায়িত এবং শ্বেত-পেশাদার কর্মীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সরকার বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর ফলে সরকারি কর্মীরা নতুন চাকরির সন্ধানে নামছেন, যা বাজারে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসার ধরনে পরিবর্তনের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রামে কাটছাঁটের কারণে সরকারি কর্মীদের মধ্যে চাকরি খোঁজার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে, ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মীরা নতুন চাকরির জন্য আবেদন করছেন। অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট ‘ইনডीड’-এর তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে DOGE-এর সঙ্গে সম্পর্কিত চাকরির আবেদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মাস শেষে এই সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেশি ছিল।

অর্থনীতিবিদ অ্যালিসন শ্রীবাস্তব এক সাক্ষাৎকারে জানান, সাধারণত নতুন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারি কর্মীদের মধ্যে চাকরি পরিবর্তনের প্রবণতা দেখা যায়, তবে বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে ভিন্ন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘হর্টিকালচার’, ‘কর্মচারী সম্পর্ক’ এবং ‘নীতি বিশ্লেষক’-এর মতো বিশেষায়িত শব্দ ব্যবহার করে চাকরি খোঁজার প্রবণতা বেড়েছে।

শ্রম বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বেকারত্বের সুবিধার জন্য নতুন করে ২ লাখ ২৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কম। যদিও সরকারি কর্মীদের মধ্যে বেকারত্বের সুবিধার জন্য আবেদন বাড়ছে, তবে এই সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে না। ১৫ই মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে, ‘আনএমপ্লয়মেন্ট কম্পেনসেশন ফর ফেডারেল এমপ্লয়িজ প্রোগ্রাম’-এর অধীনে ৮২১ জন নতুন করে আবেদন করেছেন, যেখানে তার আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ১,০৬৬।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বেত-পেশাদার কর্মীদের জন্য চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, যার প্রধান কারণ হলো কোভিড পরিস্থিতি। কোভিডকালে প্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা এবং পরামর্শক সংস্থাগুলোতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছিল, তবে এখন সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে।

তবে, বাজারের এই স্থবিরতা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন এবং আতিথেয়তা, সেইসাথে সরকারি খাতে (রাজ্য ও স্থানীয় সরকার) গত কয়েক বছরে চাকরির বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, কোভিড পরবর্তী সময়ে সরাসরি পরিষেবাগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরকারি খাতে শূন্যপদ পূরণকে উল্লেখ করা যায়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল। নির্বাচনের পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা বাড়লেও, বর্তমানে নীতিগত পরিবর্তনের কারণে অনেক ব্যবসা এবং ভোক্তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অ্যালিসন শ্রীবাস্তব বলেন, বাজারের এই ‘স্থিরতা’ দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকলে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *