আলোচিত গেমগুলো: সাফল্যের পর কী হয়?

নতুন দিগন্তের পথে: স্বাধীন গেম নির্মাতাদের সাফল্যের সংজ্ঞা।

ভিডিও গেমের জগৎ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। প্রতিদিন বাজারে আসছে নতুন নতুন গেম, যার মধ্যে কিছু অল্প সময়েই জয় করে নিচ্ছে গেমিংপ্রেমীদের মন।

তবে, এই সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক ভিন্ন গল্প – স্বাধীন গেম নির্মাতাদের (ইন্ডি গেম ডেভেলপার) গল্প। তাদের সাফল্যের সংজ্ঞা কি শুধু মুনাফার অঙ্কে বাঁধা? নাকি এর বাইরেও রয়েছে আরও অনেক কিছু?

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য বলছে, শুধু একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে (যেমন: স্টিম) গত বছর প্রায় ১৯,০০০ গেম মুক্তি পেয়েছে। এর বাইরে কনসোল এবং স্মার্টফোনের জন্য তো রয়েছেই। এত বিপুল সংখ্যক গেমের ভিড়ে একজন স্বাধীন নির্মাতার কাজ দর্শকদের নজরে আনা বেশ কঠিন।

বিশাল বিপণন বাজেট ও খ্যাতি সম্পন্ন গেম স্টুডিওগুলোর (যেমন: ট্রিপল এ টাইটেল) গেমও যখন প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে হিমশিম খায়, সেখানে ছোট দলগুলোর জন্য টিকে থাকাটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।

কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন অনেকে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর *ব্লাট্রো* (Balatro) নামের একটি গেম প্রায় ৫০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে।

এছাড়াও, *ম্যানর লর্ডস* (Manor Lords)-এর মতো কৌশল-নির্ভর গেম, যা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ১০ লক্ষ কপি বিক্রি করে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এমন অভাবনীয় সাফল্যের পর এই নির্মাতাদের ভবিষ্যৎ কী?

কোল সাপার (Coal Supper)-এর জেমস কারবাট এবং উইল টড-এর কথাই ধরা যাক। তাঁদের তৈরি করা ব্যঙ্গাত্মক গেম *থ্যাঙ্ক গুডনেস ইউ’র হেয়ার!* (Thank Goodness You’re Here!) ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে।

কারবাট বলছেন, “আমার মনে হয় না আমরা এটিকে সেভাবে সাফল্য হিসেবে দেখছি। পর্দায় সংখ্যাগুলো বাড়ছে, ইউটিউবে গেমপ্লের ভিডিও দেখা যাচ্ছে, এমনকি কিছু ‘ইরোটিক ফ্যান আর্ট’ও তৈরি হয়েছে। এর বাইরে, সাফল্যের অনুভূতিটা যেন অধরাই রয়ে গেছে।”

তাঁদের মতে, এই সাফল্যের পর পরবর্তী গেম তৈরি করাটা বেশ কঠিন।

অভিজ্ঞ গেম নির্মাতা গেব কাজিলো (Gabe Cuzzillo), যিনি *এপ আউট* (Ape Out) এবং *বেবি স্টেপস* (Baby Steps)-এর মতো গেম তৈরি করেছেন, তাঁদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেছিলেন, ভালো কিছু তৈরি করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি আসলে কী নিয়ে কাজ করতে চান, সেই বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। সাফল্যের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সেই সাফল্যের মাপকাঠিও তাই সময়ের সাথে সাথে বদলায়।

অস্ট্রেলীয় গেম নির্মাতা গ্রেস ব্রুকনারও (Grace Bruxner) তাঁর *ফ্রগ ডিটেকটিভ* (Frog Detective) সিরিজের মাধ্যমে সাফল্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন। এই সিরিজের গেমগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ব্রুকনার মনে করেন, “গেমিংয়ে সাফল্য একটি মায়া। আমার কাছে সাফল্যের অর্থ হলো, আমি এমন কিছু তৈরি করেছি যা নিয়ে আমি গর্বিত এবং যা আমার ও অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”

তবে, সাফল্যের এই পথে অনেক সময় আসে ক্লান্তি। ব্রুকনার জানিয়েছেন, তিনি এখন গেম তৈরির চাপ থেকে মুক্তি পেতে চান এবং অন্য কিছু সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগ দিতে আগ্রহী।

তাঁর মতে, যদি কোনো ছোট দল বা একক ব্যক্তি গেম তৈরি করেন, তবে তাঁদের জন্য সব সময় যে গেম তৈরি করে যেতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

অন্যদিকে, ইন্ডাস্ট্রিতে অর্থ জোগাড় করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ডেভেলপার কর্মী ছাঁটাই এবং স্টুডিও বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।

নতুন করে অর্থ পাওয়ার সুযোগও কমে যাচ্ছে। আসন্ন গেম *কনজিউম মি*-এর (Consume Me) নির্মাতা এ পি থমসন (AP Thomson) এবং জেনি জিয়াও হসিয়া (Jenny Jiao Hsia) এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা মনে করেন, এখনকার পরিস্থিতিতে নতুন গেম বাজারে আনা এবং তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন।

এই কঠিন পরিস্থিতিতেও, স্বাধীন গেম নির্মাতারা তাঁদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের কাজকে ভালোবাসেন এবং চান তাঁদের গেম খেলোয়াড়দের জীবনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনুক।

সাফল্যের সংজ্ঞা তাই তাঁদের কাছে কেবল ব্যবসার হিসাব নয়, বরং নিজেদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার একটি মাধ্যম।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *