দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ ফের শুরু হওয়ার আশঙ্কা, আটক ভাইস প্রেসিডেন্টের মুক্তি চাইছে জাতিসংঘ।
দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিরোধী নেতা রিয়েক মাcharকে গৃহবন্দী করার পর সেখানে পুনরায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
২০১৮ সালে দীর্ঘস্থায়ী এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু মাcharকে আটক করার ফলে সেই চুক্তি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মাcharের দল এসপিএলএম-আইও (SPLM-IO)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাcharের বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে আটক করে।
ভাইস প্রেসিডেন্টকে আটকের পাশাপাশি দেশটিতে সশস্ত্র সংঘাতও বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের উপর হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শান্তি চুক্তির শর্তগুলো যদি রক্ষা করা না হয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, চলাফেরার অধিকার এবং সংঘাত বন্ধের মতো বিষয়গুলোতে নজর না দিলে, তবে তা যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।
মাcharকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। প্রতিবেশী দেশগুলোর জোট ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল অথরিটি অন ডেভেলপমেন্ট’ (IGAD) জানিয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্টকে গৃহবন্দী করা শান্তিচুক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং এর ফলে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। জাতিসংঘের দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষী মিশনের প্রধান নিকোলাস হেইসমও সতর্ক করে বলেছেন, দেশটিতে আবারও ব্যাপক সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কেবল দক্ষিণ সুদানের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
মাcharের দল এসপিএলএম-আইও-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভাইস প্রেসিডেন্টকে সরকারের হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে, আটক ভাইস প্রেসিডেন্টকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দক্ষিণ সুদানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলে আসছে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির সেনাবাহিনী এবং মাcharের অনুগত মিলিশিয়া বাহিনী ‘হোয়াইট আর্মি’র মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েছে। গত ৭ই মার্চ নাসির কাউন্টিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে হোয়াইট আর্মির সংঘর্ষে অন্তত ২৭ জন সেনা নিহত হয়।
দক্ষিণ সুদানের এই সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে, দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান