যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানোয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভিসা বাতিল ও আটকের পদক্ষেপ বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
সম্প্রতি, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের আটক করা হয়েছে।
সর্বশেষ ঘটনার শিকার হয়েছেন তুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমিয়া ওজতুর্ক। তুরস্কের নাগরিক রুমিয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখায় তাকে আটক করা হয়। এরপর তার ছাত্র ভিসা বাতিল করা হয়।
শুধু রুমিয়া নন, এর আগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলসহ আরও কয়েকজনকে একই অভিযোগে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে অনেকেরই গ্রিন কার্ডও বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ইহুদিবিদ্বেষ এবং হামাসের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। যদিও শিক্ষার্থী, আইনজীবী এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
আটকের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। আলজেরীয় বংশোদ্ভূত মাহমুদ ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন এবং বর্তমানে তার যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড ছিল।
গত বছর গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে হওয়া প্রথম প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তিনি নেতৃত্ব দেন। এছাড়া, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ফেলো বাদার খান সুরিকেও সম্প্রতি আটক করা হয়েছে।
বাদার খান সুরির স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।
আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের মতে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে, আবার কোনো কোনোটি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা বলছে।
টুফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট সুনীল কুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা রুমিয়ার আটকের বিষয়ে আগে অবগত ছিলেন না। তবে, শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল এবং আটকের ঘটনায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাদের মুক্তি চেয়েছেন। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো বা মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে তাদের ওপর এই ধরনের নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললে তাদেরও একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা