মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত একটি অ্যাপ, সিগন্যাল-এর মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি উঠেছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বছর, ২০২৫ সালের ১১ই মার্চ। সেসময়, আটলান্টিক ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকে একটি সিগন্যাল গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, এই গ্রুপ চ্যাটে ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার বিস্তারিত তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যা অত্যন্ত গোপনীয় এবং শ্রেণীবদ্ধ (classified) তথ্য ছিল।
এই ঘটনার জেরে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট উভয় দলের সিনেটররাই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সিনেটের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির চেয়ারম্যান, রিপাবলিকান সিনেটর রজার উইকার এবং ডেমোক্রেট সিনেটর জ্যাক রিড যৌথভাবে পেন্টাগনের ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক জেনারেল স্টিভেন স্টিবিন্সকে একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে তাঁরা এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের উদ্বেগের মূল কারণ হল, একটি অনিরাপদ প্ল্যাটফর্মে কীভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন তথ্য আদান-প্রদান করা হলো, এবং অনুমোদনহীন ব্যক্তিদের কাছে তা কীভাবে পৌঁছালো।
সিনেটরদের পক্ষ থেকে তদন্তের অংশ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, ঘটনার ফলস্বরূপ নেওয়া পদক্ষেপসমূহ, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পেন্টাগনের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা যায় কিনা, ইত্যাদি।
এছাড়াও, অন্য কোনো বিভাগেও একই ধরনের নীতি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখারও কথা বলা হয়েছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে, এই ঘটনার জেরে ডেমোক্রেটদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, এবং কিছু রিপাবলিকানও তাঁদের সমালোচনা করেছেন।
এই বিষয়ে প্রাক্তন সিআইএ প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সিগন্যাল ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান এবং একজন সাংবাদিককে গ্রুপে যুক্ত করা “জাতীয় নিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘন”।
তাঁর মতে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এই ঘটনার কারণে মিত্র দেশগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানে দ্বিধা বোধ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রোটোকলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এই ধরনের ঘটনা শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান