৫০ বছর মাটির নিচে! শত কোটি টাকার কয়েন নিলামে, চমকে দেওয়া খবর

শত কোটি টাকার প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহ, যা মাটির নিচে ছিল অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে, নিলামে উঠতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘দ্য ট্রাভেলার কালেকশন’ নামে পরিচিত এই সংগ্রহটি নিলামে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হতে পারে।

আগামী ২০ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া এই নিলাম প্রক্রিয়া চলবে কয়েক বছর ধরে।

সংগ্রহটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সত্যিই অসাধারণ। জানা যায়, সংগ্রাহক ১৯২৯ সালের ওয়াল স্ট্রিট ক্র্যাশের (Wall Street Crash) পর সোনার মুদ্রা সংগ্রহ করা শুরু করেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিরল, ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন ও নান্দনিক মুদ্রা সংগ্রহের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার সংগ্রহে প্রায় ১৫,০০০ এর মতো মুদ্রা ছিল।

সংগ্রাহক ও তার স্ত্রী ১৯৩০ এর দশকে আমেরিকা ও ইউরোপ জুড়ে ভ্রমণ করেন এবং দুর্লভ মুদ্রা সংগ্রহ করেন। একইসঙ্গে তারা তাদের সংগ্রহ করা মুদ্রাগুলোর বিস্তারিত নথিও তৈরি করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর উত্থানের কারণে তারা ইউরোপে বসবাস করাটা অনিরাপদ মনে করেন। সম্ভবত সেকারণেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মুদ্রাগুলো সিগার রাখার বাক্সে ভরে অ্যালুমিনিয়ামের বাক্সে স্থানান্তর করে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়।

প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এই মূল্যবান মুদ্রাগুলো মাটির নিচে ছিল।

নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নুমিসমática আর্স ক্লাসিকের (Numismatica Ars Classica) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংগ্রহটিতে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি অঞ্চলের মুদ্রা রয়েছে।

প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের মুদ্রাগুলো এখানে পাওয়া যাবে। দুর্লভতার দিক থেকেও এই সংগ্রহটি অনন্য। কারণ এর অনেক মুদ্রা আধুনিককালে কার্যত দেখা যায় না।

সংগ্রাহকের উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে মুদ্রাগুলো পুনরুদ্ধারের পর একটি ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। এরপর সেগুলো নিলামের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

পরিবারের গোপনীয়তার অনুরোধের কারণে মুদ্রাগুলো কীভাবে লুকানো হয়েছিল বা কীভাবে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

সংগ্রাহকের বিস্তারিত নথিপত্র থাকায় নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মুদ্রাগুলোর উৎপত্তিস্থল ও মূল্য যাচাই করা সহজ হয়েছে। কিছু মুদ্রা উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের শুরুর দিকের নিলাম থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো, হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্যের তৃতীয় ফার্দিনান্দ-এর ১৬২৯ সালে তৈরি করা ১০০ ডুক্যাট (ducat) স্বর্ণমুদ্রা। এই মুদ্রাটি তৈরি করা হয়েছিল যখন তিনি অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া এবং বোহেমিয়ার রাজা ছিলেন।

প্রায় ৩৪৮.৫ গ্রাম ওজনের এই স্বর্ণমুদ্রাটি ইউরোপে তৈরি হওয়া স্বর্ণমুদ্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ। এছাড়াও, এখানে রয়েছে আঘা মোহাম্মদ খান কাজারের তৈরি করা “অত্যন্ত বিরল” পাঁচ টোমানের একটি সেট, যা আঠারো ও উনিশ শতকে তেহরান ও ইসফাহানে তৈরি করা হয়েছিল।

এমন সম্পূর্ণ সেট বর্তমানে মাত্র পাঁচটি রয়েছে। এর মধ্যে একটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের অ্যাশমোলিয়ান জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

মুদ্রাগুলোর বিশাল সংগ্রহ, চমৎকার গুণমান, দুর্লভতা এবং সংগ্রহের আকর্ষণীয় গল্প এই নিলামকে মুদ্রা বিষয়ক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা করে তুলবে।

আর্তুরো রুসো

ডেভিড গেস্ট নিউমিসম্যাটিকসের পরিচালক এবং সংগ্রহটির পরামর্শদাতা ডেভিড গেস্ট (David Guest) জানান, “ট্রাভেলার কালেকশন থেকে ব্রিটিশ মুদ্রাগুলো ক্যাটালগ করার সময় আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

অন্যদিকে যেমন মুদ্রাগুলোর গুণমান ছিল অসাধারণ, তেমনই অনেক মুদ্রা এমন ছিল যা গত ৮০ বছরে নিলামে ওঠেনি, এমনকি কিছু মুদ্রার কোনো রেকর্ডও নেই।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *