রাশিয়ান ফিগার স্কেটার কামিলা ভ্যালিভার বিরুদ্ধে ডোপিং মামলায় নতুন মোড়। বিশ্ব অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা (ওয়াডা)-এর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ গোপন ও বিকৃত করার অভিযোগ এনেছেন ভ্যালিভার আইনজীবীরা।
তাদের দাবি, এই পদক্ষেপের কারণে ক্রীড়া আদালতে (কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্ট বা ক্যাস) ন্যায্য রায় পাননি তাদের মক্কেল।
২০২২ সালের বেইজিং অলিম্পিকে একটি ডোপিং পরীক্ষায় পজিটিভ হন ভ্যালিভা। ফলে তিনি তার দলগত ইভেন্টে স্বর্ণপদক থেকে বঞ্চিত হন এবং ব্রোঞ্জ পদক জেতেন।
এই ঘটনার জেরে তাকে চার বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ভ্যালিভার আইনজীবীরা বলছেন, ওয়াডা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রমাণ গোপন করেছে যা প্রমাণ করতে পারত যে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করেছেন।
তাদের মূল অভিযোগ, ওয়াডা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ গোপন করেছে এবং মামলার শুনানিতে তা উপস্থাপন করেনি।
জানা গেছে, সুইস বিজ্ঞানী মার্শাল সৌগি একটি পরীক্ষা চালান, যেখানে ভ্যালিভার দাদা তার জন্য স্ট্রবেরি স্মুদি তৈরি করেছিলেন এবং সেই স্মুদির মাধ্যমে কিভাবে ভ্যালিভার শরীরে নিষিদ্ধ উপাদান প্রবেশ করতে পারে, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হয়।
এই পরীক্ষার ফলাফল ভ্যালিভার অনুকূলে ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু আইনজীবীদের অভিযোগ, ক্যাস-এ শুনানির সময় ওয়াডা এই পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। এমনকি, যখন তারা এই তথ্য প্রকাশ করে, তখন সেটিকে পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা ভ্যালিভার পক্ষে কম সহায়ক ছিল।
ওয়াডার মুখপাত্র জেমস ফিৎসজারাল্ড অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াডার পক্ষ থেকে কোনো ভুল করা হয়নি এবং তারা এই বিষয়ে তাদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে বজায় রাখবে।
ফিৎসজারাল্ড আরও জানান, সৌগির তৈরি করা রিপোর্টটি ওয়াডার পক্ষ থেকে প্রকাশ করার মতো ছিল না এবং এটি ক্যাস-এর রায়ের ওপর কোনো প্রভাব ফেলত না। কারণ, ক্যাস অ্যাথলেটের স্ট্রবেরি ডেজার্ট সম্পর্কিত ব্যাখ্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেনি।
ভ্যালিভার আইনজীবীরা বলছেন, ওয়াডার এই পদক্ষেপ ‘প্রক্রিয়াগত জালিয়াতি’-র শামিল। তাদের মতে, সৌগির পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল, কিভাবে ভ্যালিভার শরীরে নিষিদ্ধ উপাদান প্রবেশ করেছে, তা খুঁজে বের করা।
কিন্তু ওয়াডা সেই পরীক্ষার কিছু অংশ গোপন করে এবং কিছু অংশে পরিবর্তন আনে।
এই মামলার সঙ্গে জড়িত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে ওষুধটি ভ্যালিভার শরীরে পাওয়া গিয়েছিল, সেই একই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করার অভিযোগে চীনা সাঁতারুদের কোনো শাস্তি হয়নি।
ওয়াডা তাদের এই ঘটনার জন্য চীনের পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছিল। ফলে, বিভিন্ন দেশের অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে ওয়াডার ভিন্ন আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কামিলা ভ্যালিভার এই মামলা ক্রীড়া বিশ্বে ডোপিং-বিরোধী লড়াইয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সুইস সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়।
ভ্যালিভার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের শেষের দিকে। শোনা যাচ্ছে, তিনি ২০২৬ সালের মিলান-কর্টিনা অলিম্পিকে পুনরায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস