ইতালিতে শরণার্থীদের সাহায্যকারীদের ওপর নজরদারি? তোলপাড়!

ইতালির সরকার মানবাধিকার সংস্থা (এনজিও)-এর সদস্যদের উপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, শরণার্থীদের সাহায্যকারী একটি এনজিও-র সদস্যদের উপর নজরদারির জন্য সরকার বিতর্কিত স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ‘কোপাসির’-এর কাছে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ইতালির মন্ত্রিসভার আন্ডার সেক্রেটারি আলফ্রেডো মান্তোভানো এক গোপন বৈঠকে এই কথা স্বীকার করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা ‘মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস’-এর প্রতিষ্ঠাতা লুকা কাসারিনি এবং জিউসেপ ক্যাকিয়ার উপর নজরদারি চালানো হয়েছে।

শরণার্থীদের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করা এই এনজিও-কে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, ইসরায়েল-ভিত্তিক ‘পারাগন সলিউশনস’-এর তৈরি করা সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়্যার ‘গ্রাফাইট’ ব্যবহার করে কর্মীদের উপর নজরদারি চালানো হয়েছে।

কোপাসির এখন তদন্ত করে দেখছে যে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইন ভেঙেছিল কিনা। খুব শীঘ্রই তারা তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল জানাবে।

গত জানুয়ারি মাস থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। বেশ কয়েকজন ইতালীয় কর্মী ও একজন সাংবাদিককে তাদের ফোনে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছিল মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ।

প্রথমে সরকার এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। তবে পরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম তদারকি করেন এমন একজন কর্মকর্তা মান্তোভানো কমিটির কাছে স্বীকার করেন, অবৈধ অভিবাসন রোধে ‘প্রতিরোধমূলক’ তদন্তের অংশ হিসেবে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছিল।

যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, সাংবাদিক ফ্রান্সেসকো ক্যানসেল্লাটোর উপর নজরদারির জন্য এটি ব্যবহার করা হয়নি।

ইতালির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘লা রিপাবলিক’-এর প্রথম প্রতিবেদনে মান্তোভানোর এই দাবির কথা জানা যায়। এরপর সরকার এখনও পর্যন্ত এর কোনো প্রতিবাদ জানায়নি।

এদিকে, স্পাইওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর ‘পারাগন সলিউশনস’ ইতালির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থগিত করেছে। কোম্পানিটির তৈরি করা স্পাইওয়্যার সাধারণত অপরাধীদের উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হয়।

মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সাংবাদিক সূত্রে মান্তোভানোর দাবির বিষয়ে জানতে পেরেছে। তারা আরও বলেছে, ‘একটি স্বৈরাচারী শাসনের মতো গোপন অভিযান’ বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে।

কোপাসিরের তদন্তের পাশাপাশি, রোম, পালের্মো, নেপলস, বোলোগনা এবং ভেনিসের মতো পাঁচটি শহরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।

মানবাধিকার কর্মী ম্যাটিয়া ফেরারারি এবং ডেভিড ইয়াম্বিওসহ বেশ কয়েকজন এই স্পাইওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানসের সঙ্গে কাজ করেন।

মেডিটেরানিয়া সেভিং হিউম্যানস আরও জানায়, ‘পাঁচজন প্রসিকিউটর ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, কেউ না কেউ সাহস দেখিয়ে প্রমাণ করবেন যে, এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়’।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *