ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে এক কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আলোচনার শুরুতে তিনি কিছুটা আশাবাদী সুর প্রকাশ করেছেন, যদিও এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক চালের ইঙ্গিত।
কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটা জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তি আলোচনা প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের কিছু মন্তব্য, যা রাশিয়ার দখলে থাকা চারটি অঞ্চলের জনগণকে মস্কোর শাসনের প্রতি সমর্থন জানানো সম্পর্কিত ছিল, তা আসলে ‘ক্রেমলিনের বার্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’।
তবে জেলেনস্কি মনে করেন, এর কিছু সুবিধা রয়েছে।
জেলেনস্কির যুক্তি হলো, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হোয়াইট হাউজের দল বুঝতে পারবে যে ক্রেমলিন ভালো কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে না।
শান্তি আলোচনা যত এগোবে, তত বেশি করে রাশিয়া শর্ত জুড়ে দেবে এবং তারা একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি চায় না, তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে রাশিয়ার উপর থেকে বিশ্বাস হারাবেন।
যদিও ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত জ্বালানি ও সমুদ্র বিষয়ক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবে রাশিয়া এতে কিছু শর্ত দিয়েছে।
এমনকি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেমলিন জানায়, কৃষিপণ্য বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলে তারা সমুদ্র বিষয়ক যুদ্ধবিরতিতে অংশ নেবে।
এছাড়া, রুশ গোলার বর্ষণে খেরসনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় এটাও স্পষ্ট যে, জ্বালানি বিষয়ক যুদ্ধবিরতিও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না।
যুদ্ধবিরতিগুলো সমানভাবে কার্যকর না হলেও জেলেনস্কি স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দুটি বিবৃতিতে অনেক বিষয় অস্পষ্ট রাখা হয়েছে।
কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিল।
জেলেনস্কি বলেন, ‘যদি কেউ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে কী হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি ভেঙে যেতে দিতে চায়নি।’
ইউক্রেন অবশ্য রাশিয়ার যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। তবে এর মাধ্যমে ক্রেমলিনের আচরণে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে কিনা, তা বলা কঠিন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেইর গাইলের মতে, জেলেনস্কি সম্ভবত পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমঝোতার পথে হাঁটছেন, কারণ তিনি এর আগের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, কঠোর অবস্থান নিলে কী হয়।
অন্যদিকে, মাসখানেক আগে লন্ডনে দেওয়া এক দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো এখনো অনেক দূরের পথ।
হোয়াইট হাউস তখন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
যদিও পরে সৌদি আরবে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর তা আবার শুরু হয়।
তবে রাশিয়া এখনো সেই শর্ত মানেনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যেকোনো যুদ্ধবিরতি অবশ্যই ‘সংঘাতের মূল কারণগুলো’ দূর করার দিকে পরিচালিত হতে হবে এবং এর জন্য আলোচনার প্রয়োজন।
জেলেনস্কির কৌশলগত দিক হলো, যদি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে বড় ধরনের হামলা হয়, অথবা কৃষ্ণ সাগরে অন্য কোনো অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, তাহলে কিয়েভ কত দিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরবে, তা বলা কঠিন।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দিনই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তারা যেন যুদ্ধবিরতিকে ব্যবহার করে কৃষ্ণ সাগরের পূর্বাঞ্চলে নৌবাহিনীর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা না করে।
হোয়াইট হাউস যদি শান্তি আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি না দেখে, তাহলে ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়াতে রাজি হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মস্কোর প্রতি কিছু ছাড় দিয়েছে, যেমন—ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প সম্ভবত জেলেনস্কির চেয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
কেইর গাইলের মতে, পুতিন এবং তাঁর সহযোগীরা হিসাব করছেন, কতটা ছাড় আদায় করা যায় এবং কতদূর পর্যন্ত গেলে ট্রাম্প বিব্রত হবেন।
সোমবার সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছে, তবে কোনো সুনির্দিষ্ট ফল পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আগামী কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্টের এই নতুন ধৈর্য্যের পরীক্ষা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান