ইসরায়েলের পার্লামেন্ট, নেসেট, সম্প্রতি একটি বিতর্কিত আইন পাস করেছে যা বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে। বৃহস্পতিবার (নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) ৬৭ ভোটের মাধ্যমে এই আইনটি অনুমোদন লাভ করে, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিচার বিভাগ সংস্কারের বৃহত্তর পরিকল্পনার একটি অংশ।
এই পদক্ষেপ ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অনেকে মনে করছেন।
নতুন আইন অনুযায়ী, বিচারক নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটিতে রাজনীতিবিদদের প্রভাব বাড়বে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারক, আইনপ্রণেতা এবং বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নয় সদস্যের কমিটি বিচারক নির্বাচন করে।
নতুন আইনে এই কমিটিতে তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও অন্য একজন মন্ত্রী, একজন কোয়ালিশন আইনপ্রণেতা, একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা এবং দুজন সাধারণ প্রতিনিধি থাকবেন, যাদের মধ্যে একজন সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অন্যজন বিরোধী দল কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বিরোধী দল। তারা মনে করে, এই আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে এবং ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
বিরোধী দল অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
বিচার বিভাগের সংস্কারের এই পরিকল্পনাটি ২০২৩ সালের শুরু থেকে ইসরায়েলি সমাজে বিভাজন তৈরি করেছে। সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এই সংস্কারের ফলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার বিচার প্রভাবিত হতে পারে।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হলো আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য আনা।
আইনের সমালোচকরা একে ইসরায়েলি গণতন্ত্রের জন্য একটি “বিপর্যয়” এবং “আত্মঘাতী” পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই সংস্কারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই পদক্ষেপ বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে সীমিত করবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আরও বেশি সুযোগ তৈরি করবে।
আইনটির সমর্থকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা হবে।
এই আইনের ফলে ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং সুপ্রিম কোর্টে এর ভবিষ্যৎ কী হয়, সেদিকেই এখন সকলের দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা