যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দেশটির জাদুঘরগুলোতে “বিভাজন সৃষ্টিকারী” মতাদর্শ দূর করার লক্ষ্যে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। এই আদেশের মাধ্যমে তিনি মূলত স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন সহ অন্যান্য ফেডারেল ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্পের মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে জাতিগত বিভাজন এবং আমেরিকান ইতিহাসের ভুল উপস্থাপনার শিকার হচ্ছে। খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো আমেরিকান সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে রক্ষা করা।
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই নির্বাহী আদেশে, ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে এই পরিবর্তনের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের মতে, স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন-এর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত অনুপ্রেরণা এবং আমেরিকান গৌরবকে তুলে ধরা।
তার অভিযোগ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রতিষ্ঠানটি “জাতি-কেন্দ্রিক বিভাজনমূলক” মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এই কারণে, আমেরিকান আর্ট মিউজিয়াম এবং ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আফ্রিকান আমেরিকান হিস্টরি অ্যান্ড কালচার সহ স্মিথসোনিয়ানের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে আমেরিকান এবং পশ্চিমা মূল্যবোধকে “ক্ষতিকর ও নিপীড়নমূলক” হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, জাদুঘরগুলো “ঐতিহাসিক জ্ঞান” প্রদানের স্থান, যেখানে “মতাদর্শগত প্রভাব” বা “বিভাজনমূলক বয়ান” পরিবেশন করা উচিত নয়। এই আদেশের আওতায়, স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন এমন কোনো প্রদর্শনী করতে পারবে না যা আমেরিকান মূল্যবোধকে খাটো করে, জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করে অথবা ফেডারেল আইন ও নীতির পরিপন্থী কোনো ধারণা প্রচার করে।
এমনকি, নির্মাণাধীন উইমেন’স হিস্টরি মিউজিয়ামেও ট্রান্স নারীদের নিয়ে কোনো প্রদর্শনী করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ২০২০ সালের জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যে জাতিগত বিভাজন তৈরি হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে “ঐতিহাসিক স্থান”-গুলোতে কনফেডারেট স্মৃতিস্তম্ভ এবং প্রতীকগুলো পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প এর আগে ওয়াশিংটন ডিসির জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস-এর প্রোগ্রামিংয়ে পরিবর্তন আনারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ “বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি” (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) নীতিমালার বিরুদ্ধেও একটি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে ব্যাপকতা লাভ করেছিল। এছাড়া, তিনি “ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি” (Critical Race Theory) নামক তত্ত্বের বিরোধিতা করেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান বর্ণবাদের বিশ্লেষণ করে।
এই তত্ত্বটি বর্তমানে জাদুঘর এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এর ফলে ইতিহাস এবং সংস্কৃতির উপস্থাপনায় পরিবর্তন আসতে পারে এবং বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এ ধরনের ঘটনা ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে সরকারের প্রভাব বিস্তারের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা ইতিহাসের ব্যাখ্যা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা