বর্তমান ডিজিটাল যুগে, খবর আমাদের হাতের মুঠোয়। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের দৌলতে, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়।
ভালো খবর তো আছেই, কিন্তু খারাপ খবরেরও যেন শেষ নেই। যুদ্ধ, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ – এইসব নেতিবাচক খবরগুলো যখন আমরা একটানা দেখতে থাকি, তখন তাকে বলা হয় ‘ডুমস্ক্রোলিং’।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এই শব্দটা প্রথম ব্যবহার করা হয় এবং দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বাড়ে। মানুষ যখন উদ্বেগের মধ্যে ছিল, তখন তারা ক্রমাগত খবর দেখছিল, জানার চেষ্টা করছিল কি ঘটছে।
কখন কি হবে, সেই ভয়ে তারা যেন খবর দেখতেই থাকতো।
কিন্তু অতিরিক্ত খবর দেখা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। উদ্বেগের (anxiety) জন্ম হয়, মন খারাপ হতে থাকে, হতাশ লাগে।
এমনকী, শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। একটানা খবর দেখতে থাকলে, আমাদের মনে হতে পারে যেন একটা ‘মহাবিপদ’ ঘনিয়ে আসছে।
কেন আমরা ডুমস্ক্রোলিং করি? এর কারণ হতে পারে, খবর দেখে আমরা যেন একটা নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি পাই।
মনে হয়, সব খবর জানা থাকলে আমরা বিপদ থেকে বাঁচতে পারবো। আবার, আমাদের মস্তিষ্ক কিছু নেতিবাচক খবর দেখার সময় ডোপামিন (dopamine) নিঃসরণ করে, যা আমাদের আরও বেশি খবর দেখতে উৎসাহিত করে।
ডুমস্ক্রোলিং-এর খারাপ দিকগুলো সত্যিই অনেক। অতিরিক্ত খবর দেখলে আমরা মানসিক অবসাদে ভুগতে পারি। আমাদের উদ্বেগ বাড়ে, সেই সাথে অনেক সময় ঘুম কম হয়।
তুরস্কের ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উপর করা একটি গবেষণা দেখা গেছে, ডুমস্ক্রোলিং তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাহলে, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? প্রথমে, নিজের ফোনের ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং খবরের অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিতে পারেন, যখন আপনি খবর দেখবেন।
প্রয়োজনে, একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তিনি আপনাকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে, খবর দেখা জীবনের একটা অংশ, কিন্তু অতিরিক্ত খবর দেখলে তা আমাদের সুস্থ জীবনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই, সচেতন হোন এবং ডুমস্ক্রোলিং-এর খারাপ প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচান।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন