যুদ্ধ-পরিস্থিতি! তাইওয়ানের কাছে দ্বীপ থেকে ১ লাখ মানুষের সুরক্ষায় জাপানের পদক্ষেপ!

জাপান প্রস্তুত হচ্ছে: তাইওয়ান সংঘাতের আশঙ্কায় ১ লক্ষাধিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা।

চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য কোনো সামরিক সংঘাতের উদ্বেগে জাপানের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশটি প্রথমবারের মতো তাইওয়ানের কাছাকাছি দ্বীপগুলো থেকে ১ লক্ষাধিক বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

এই পরিকল্পনায় জাপানের দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের সাকishima দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার বাসিন্দা এবং ১০ হাজার পর্যটককে সরিয়ে নেওয়ার জন্য নৌ ও বিমান ব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই দ্বীপগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া নাগরিকদের ৬ দিনের মধ্যে জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আটটি প্রিফেকচারে (প্রশাসনিক অঞ্চল) নিয়ে যাওয়া হবে।

এরপর তাদের কিয়ুশু দ্বীপে নেওয়া হবে এবং সেখান থেকে অন্যান্য গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। জাপানি কর্তৃপক্ষ আগামী বছর এপ্রিল মাস থেকে সাকishima দ্বীপপুঞ্জে এই ধরনের জরুরি অবস্থার মোকাবিলার জন্য মহড়া শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়। তাইওয়ানের উপর সামরিক চাপ বাড়ানো এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও তারা উড়িয়ে দেয় না।

এই পরিস্থিতিতে, তাইওয়ানের কাছাকাছি অবস্থিত জাপানের দ্বীপগুলোতে যেকোনো ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি বেড়েছে। এই কারণে, জাপান সরকার ঐ দ্বীপগুলোর সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

জাপান সরকার ইয়োনাগুনি দ্বীপে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট (surface-to-air guided missile units) মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে। তাইওয়ান থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে জাপানের স্ব-রক্ষা বাহিনীর একটি ঘাঁটি রয়েছে।

বর্তমানে সেখানে দুই সপ্তাহের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানিসহ অস্থায়ী ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দেশের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

এই পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে, তাইওয়ানের নিরাপত্তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির কারণে এই অঞ্চলে অস্থিরতা আরও বেড়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসলে তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দুর্বল হতে পারে।

জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি জানিয়েছেন, সশস্ত্র হামলার আশঙ্কার পরিস্থিতিতে এই জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ওকিনাওয়া, যেখানে প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে, তাইওয়ানের জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ভূমিকা পালন করতে পারে।

এছাড়াও, চীন এবং জাপানের মধ্যে পূর্ব চীন সাগরের সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ নিয়েও বিবাদ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *