যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘বৈষম্যমূলক’ ভর্তি নীতি আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। বৃহস্পতিবার (গতকাল) দেশটির বিচার বিভাগ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তদন্তের আওতায় আসা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলে, লস অ্যাঞ্জেলেস-এর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ) এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভাইনের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নীতি সম্ভবত দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ২০২৩ সালের একটি রায় লঙ্ঘন করেছে, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বা ‘অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন’-এর অবসান ঘটানো হয়েছিল। মূলত শ্বেতাঙ্গ এবং এশীয়-মার্কিন শিক্ষার্থীদের সুযোগ কমে যাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতেই এই তদন্ত শুরু হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন এর আগে থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ কর্মসূচি—সংক্ষেপে ‘ডিইআই’ (Diversity, Equity, and Inclusion) প্রোগ্রাম—বাতিল করার চেষ্টা করছিলেন। তাদের অভিযোগ, এই ধরনের কর্মসূচি শ্বেতাঙ্গ ও এশীয়-মার্কিন শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, ভর্তিতে ‘জাতিগত-ভিত্তিকভাবে’ সুযোগ তৈরি করা হলে তারা ফেডারেল তহবিল হারাতে পারে। এই ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফেডারেল সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ারও সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ বৈষম্য বন্ধ করতে এবং মেধার ভিত্তিতে সুযোগ ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমেরিকার প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত তাদের কঠোর পরিশ্রম, মেধা এবং চরিত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হওয়া, ত্বকের রঙের ভিত্তিতে নয়।”
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তারা তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, ঠিক কী কারণে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আলাদাভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services) ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল স্কুল’-এর বিরুদ্ধে ভর্তিতে জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। বিভাগটি নির্দিষ্ট করে কোনো স্কুলের নাম উল্লেখ করেনি, তবে জানিয়েছে, নাগরিক অধিকার অফিসের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন ক্যালিফোর্নিয়া শিক্ষা বিভাগের বিরুদ্ধেও একটি তদন্ত শুরু করেছে। এখানে প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, রাজ্যের একটি আইন, যেখানে স্কুলগুলোকে শিক্ষক ও কর্মীদের জানাতে নিষেধ করা হয়েছে, যদি কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে তাদের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস