যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিমালার কড়া শাসনের শিকার হয়েছেন তুরস্কের এক শিক্ষার্থী। দেশটির বোস্টন এলাকার একটি শহরতলীতে বসবাস করা ৩০ বছর বয়সী রুমিজা ওজতুর্ককে সম্প্রতি আটক করেছে দেশটির ফেডারেল কর্তৃপক্ষ। তিনি টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি’র ছাত্রী।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানানোয় তাকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রুমিজা ওজতুর্ককে আটকের পর দ্রুত ম্যাসাচুসেটস থেকে লুইজিয়ানায় একটি ডিটেনশন সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে।
জানা গেছে, একজন ফেডারেল বিচারক শুনানির সুযোগ পাওয়ার আগেই অভিবাসীদের আটক করে তাদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো বা নির্বাসিত করার ঘটনা ঘটছে।
মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের এক মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, হামাসকে সমর্থনের অভিযোগে রুমিজাকে আটক করা হয়েছে। তবে, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, হামাস একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট, মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ওজতুর্কের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাদের পড়াশোনা এবং ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভিসা দিয়েছিলাম, সামাজিক কর্মী হওয়ার জন্য নয়।”
বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, রুমিজা ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি শুধুমাত্র একটি ছাত্র পত্রিকার জন্য একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন, যেখানে টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করতে বলা হয়েছিল।
রুমিজার এক বন্ধু জেনিফার হয়ডেন বলেন, “আমি যতটুকু জানি, রুমিজা শুধুমাত্র থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’র জন্য একটি পার্টি আয়োজন করেছিলেন। ছাত্র সংসদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লেখা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ—এ দুটির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের স্বপক্ষে আমি কোনো প্রমাণ দেখিনি।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করে। এতে এক হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
এরপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় গাজায় ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
রুমিজার এই আটকের ঘটনাটি মূলত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিরই অংশ। ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, যারা “সন্ত্রাসী-পন্থী, ইহুদি-বিদ্বেষী, এবং আমেরিকান-বিরোধী কার্যকলাপে” জড়িত, তাদের তিনি দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন।
এর আগে, গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহমুদ খলিল নামে এক ফিলিস্তিনি কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। তিনিও বর্তমানে বিতাড়নের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গত সপ্তাহে, লেবাননের কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিতে যাওয়া ড. রেশা আলাউয়েকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হয়।
অভিযোগ, তিনি হিজবুল্লাহর একজন নেতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
এদিকে, রুমিজার মুক্তির দাবিতে সোমারভিলে সিটি হলের সামনে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলা এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আইসিই-এর ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা জানান।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দেয় এবং গান গায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া ক্যারিনা কুরবান বলেন, “আমি এখানে জন্মেছি এবং আমি একজন মার্কিন নাগরিক। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি তাদের জন্য কথা বলতে চাই, যাদের কথা বলার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমেরিকা মুক্ত চিন্তার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। যদি আমরা সেই স্বাধীনতা না পাই, তাহলে আমাদের গন্তব্য কোথায়?”
আটক হওয়ার সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রুমিজাকে কয়েকজন লোক ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মুখ ঢাকা ছিল।
রুমিজার ফোন কেড়ে নেওয়ার পরে তাকে হাতকড়া পরানো হয়।
জানা গেছে, আটকের সময় রুমিজা তার বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের জন্য দেখা করতে যাচ্ছিলেন।
রুমিজার আইনজীবী মাহসা খানবাবাই জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত তার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
তিনি রুমিজার মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন এবং জরুরি ভিত্তিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
টাফ্টস ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট সুনীল কুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং আশা করছি রুমিজাকে তার আইনি অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস