ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল থাইল্যান্ড ও মায়ানমার, ব্যাংককে ধসে পড়ল নির্মাণাধীন বহুতল ভবন।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে থাইল্যান্ড ও প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারে। ভূমিকম্পের ফলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।
খবর সূত্রে জানা গেছে, হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মায়ানমারে। এর প্রভাবে ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে কম্পন অনুভূত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বহুতল ভবন, যার উপরে ক্রেন বসানো ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।
এসময় আশেপাশে থাকা লোকজন আতঙ্কে চিৎকার করে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ব্যাংককের জনপ্রিয় চাতুчак মার্কেটের কাছে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কতজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছিলেন, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
ভূমিকম্পের পর ৬.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়।
এরপর ব্যাংককের বিভিন্ন ভবনে থাকা লোকজনকে বাইরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্কটল্যান্ডের এক পর্যটক ফ্র্যাসার মর্টন জানান, “হঠাৎ করেই পুরো ভবনটি কাঁপতে শুরু করে।
সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। প্রথমে আমি শান্তভাবে হাঁটা শুরু করি, কিন্তু এরপর ভবনটি সত্যিই খুব জোরে কাঁপতে শুরু করে।
লোকজন সিঁড়ি দিয়ে হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করে।
ব্যাংককের একটি শপিং মলে ক্যামেরা সরঞ্জাম কিনতে আসা মর্টন, অন্যান্য হাজারো মানুষের মতো, উঁচু ভবনগুলো থেকে দূরে, বেনজাসিরি পার্কে আশ্রয় নেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি যখন বাইরে আসি, তখন দেখি পুরো ভবনটি দুলছে, আর ধুলো উড়ছে।
চারিদিকে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা এবং জার্মানির জিএফজেড সেন্টার ফর জিওসায়েন্স জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারে এবং এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পের কারণে পুরোনো রাজপ্রাসাদ এবং অন্যান্য ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মান্দালয়ের কাছে সাগাইং অঞ্চলে একটি ৯০ বছর বয়সী পুরোনো সেতু ভেঙে পড়েছে।
এছাড়া মান্দালয় ও মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনকে সংযোগকারী সড়কের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসেন।
তবে সেখানে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে ভূমিকম্পে কিছু ধর্মীয় স্থান এবং বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।
ব্যাংককে ভূমিকম্পের সময় ভবনগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত উঁচু ভবনগুলোর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করেন।
বৃহত্তর ব্যাংকক অঞ্চলে ১ কোটির বেশি মানুষের বসবাস, যাদের অনেকেই বহুতল অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন।
ভূমিকম্পের সময় উঁচু ভবনের সুইমিং পুলের পানি উপচে পড়ে এবং অনেক ভবন থেকে ধ্বংসাবশেষ নিচে পড়তে দেখা যায়।
ব্যাংককের হাঙ্গেরীয় বাসিন্দা জুজানা ভ্যারি-কোভাকস বলেন, “এর আগে আমি মিয়ানমারে দু’বার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তবে সেগুলো ছিল মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য, একটি বড় ঝাঁকুনি।
কিন্তু এখানে অন্তত এক মিনিটের বেশি সময় ধরে কম্পন চলছিল। আমার স্বামী একটি বহুতল ভবনে ছিলেন, আমার মনে হয় সেটি আরও ভয়াবহ ছিল।
থাইল্যান্ডের দুর্যোগ প্রতিরোধ বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি দেশটির প্রায় সব অঞ্চলেই অনুভূত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সে ঘটনার প্রভাব মূল্যায়ন করতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস