নিনজা টার্টেলস: পুরনো দিনের কঠিন খেলা, নতুন করে ফেরা
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, ভিডিও গেমের জগৎ ছিল অন্যরকম। গ্রাফিক্স তেমন উন্নত ছিল না, গেম খেলার সুযোগও ছিল সীমিত। সেই সময়ে বাজারে আসা ‘টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টেলস’ (Teenage Mutant Ninja Turtles) গেমটি ছিল তেমনই একটি চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা।
সম্প্রতি, প্লেস্টেশন ৪-এ (PlayStation 4) ‘কাওয়াবাঙ্গা কালেকশন’-এর (Cowabunga Collection) মাধ্যমে পুরনো দিনের সেই গেমটি খেলার সুযোগ হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই আজকের এই লেখা।
নিনজা টার্টেলস-এর গল্পটা অনেকেরই জানা। চার কচ্ছপ-বন্ধু – লিওনার্দো, রাফায়েল, ডোনাটেলো ও মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, যারা নিউইয়র্কের আন্ডারগ্রাউন্ডে বাস করে এবং তাদের শিক্ষক, মাস্টার স্প্লিন্টারের কাছ থেকে মার্শাল আর্ট শিখে খারাপ লোকেদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। এই গেমটিতেও খেলোয়াড়দের একই মিশনে নামতে হয়।
গেমটি খেলতে গিয়ে প্রথমেই মনে হলো, আধুনিক গেমের তুলনায় এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ কঠিন। শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করা, জাম্প করা – সবকিছুতেই ছিল বিশেষ দক্ষতা।
আধুনিক গেমে যেখানে সামান্য ভুলের সুযোগ থাকে, সেখানে এই গেমে সামান্য অসাবধানতাতেই জীবন শেষ হয়ে যেত। পুরনো দিনের কথা মনে করে অনেকেই হয়তো বলবেন, তখন গেমগুলো এত সহজ ছিল না। প্রতিটি পদক্ষেপ সাবধানে ফেলতে হতো, কারণ সামান্য ভুল মানেই আবার শুরু করা।
এখনকার মতো “পাওয়ার-আপ” বা অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা এখানে ছিল না।
গেমের একটি বিশেষ স্তর ছিল পানির নিচে বোমা নিষ্ক্রিয় করার। সময়মতো বোমা নিষ্ক্রিয় করতে না পারলে খেলা শেষ!
এই স্তরটি এতটাই কঠিন ছিল যে, অনেকে হয়তো বলবেন, যেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (HSC) কঠিন কোনো বিষয়ের মতো।
তবে, পুরনো দিনের সেই কঠিন গেম খেলার অভিজ্ঞতা এখনও ভোলার মতো নয়। প্রথমে কিছুটা হতাশ হলেও, ধীরে ধীরে পুরনো কৌশলগুলো মনে আসতে শুরু করে।
কচ্ছপদের বিশেষ ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করে, যেমন – ডোনাটেলোর লম্বা লাঠি, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর নুঞ্চাকু, লিওনার্দোর তরবারি এবং রাফায়েলের ছোট ছুরি – পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেত।
আস্তে আস্তে গেমের গ্রাফিক্সের সঙ্গেও মানিয়ে নিলাম। শত্রুদের ডিজাইন যদিও খুব স্পষ্ট ছিল না, তবুও তাদের সঙ্গে লড়াই করতে ভালোই লাগছিল।
আসল কথা হলো, সেই সময় আমাদের হাতে বেশি গেম ছিল না। তাই, যা খেলতাম, তা ভালো করে খেলতাম, চেষ্টা করতাম শেষ করার।
এখনকার মতো এত গেমের ছড়াছড়ি ছিল না। এখন আমরা যেন এক গেম থেকে আরেক গেমে শুধু উড়ে বেড়াই, যেন এক সাবস্ক্রিপশন থেকে আরেক সাবস্ক্রিপশনে।
এই গেমটি খেলার পর মনে হলো, জীবনের অনেক কিছুই আসলে ধীরে ধীরে উপভোগ করার মতো। কোনো কিছু সহজে পাওয়ার চেষ্টা না করে, ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে তার ফল অনেক বেশি সুন্দর হয়।
নিনজা টার্টেলস-এর এই নতুন অভিজ্ঞতা আমাকে সেটাই শিখিয়েছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian