মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড বাতিল: কী প্রমাণ দরকার?

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ডধারীদের কী কারণে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অনেক মানুষের কাছে গ্রিন কার্ড (Green Card) একটি স্বপ্নের মতো। এটি তাদের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়। কিন্তু সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে গ্রিন কার্ড (Green Card) থাকা সত্ত্বেও অনেককে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আটক করেছে অথবা বিমানবন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, সরকার গ্রিন কার্ড (Green Card) রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিভিন্ন কারণে দেশ থেকে বের করে দিতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো: গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া, অভিবাসন সংক্রান্ত জালিয়াতি করা ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গ্রিন কার্ড (Green Card) ধারক ব্যক্তি ধর্ষণ, খুন অথবা মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্রিন কার্ড (Green Card) পেতে আবেদন করার সময় যদি কোনো ব্যক্তি তথ্য গোপন করেন বা মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে তাকেও বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে পারেন। সম্প্রতি, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর ঘটনা সামনে এসেছে। তিনি গ্রিন কার্ড (Green Card) পাওয়ার জন্য আবেদন করার সময় জাতিসংঘের একটি সংস্থার সঙ্গে তার কাজের বিষয়টি জানাননি। এর ফলে তাকে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সন্দেহের চোখে দেখে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়।

অন্যদিকে, ভিসা (Visa) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ব্যক্তিদেরও কিছু ক্ষেত্রে বিতাড়িত করার নিয়ম রয়েছে। ভিসাধারীরা যদি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও সেখানে থাকেন অথবা তারা অবৈধভাবে কাজ করেন, তাহলে তাদেরও বিতাড়িত করা হতে পারে। বিমানবন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা ভিসা (Visa) থাকা সত্ত্বেও কাউকে প্রবেশের অনুমতি নাও দিতে পারেন। এর কারণ হতে পারে, অতীতে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকা, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কা অথবা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে কাজ করার সম্ভাবনা ইত্যাদি।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, গ্রিন কার্ড (Green Card) বা ভিসা (Visa) রয়েছে এমন কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আগে সরকার পক্ষের আইনজীবীকে প্রমাণ করতে হবে যে, ওই ব্যক্তি বিতাড়িত হওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে তাদের ‘স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ (clear and convincing evidence) পেশ করতে হয়। সাধারণত, আদালতের শুনানিতে একজন ইমিগ্রেশন বিচারক (immigration judge) এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।

উদাহরণ হিসেবে, সম্প্রতি জার্মানির এক প্রকৌশলী, যিনি গ্রিন কার্ড (Green Card) ধারক ছিলেন, তাকে মাদক ও মদ্যপান সংক্রান্ত পুরোনো একটি অভিযোগের কারণে আটক করা হয়েছিল। এছাড়া, লাওস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে বসবাস করা একজন নারী, যিনি মারিজুয়ানা (marijuana) পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাকেও বিতাড়িত করা হয়।

তবে, বর্তমান সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে, সরকার কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই কিছু মানুষকে টার্গেট করছে। উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। যদিও পরে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই।

এই ধরনের ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বর্তমান প্রশাসন বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে পারছে না। তারা বলছেন, সরকার বিতাড়নের জন্য সাধারণ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করছে না। যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাদেরও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা প্রত্যেক নাগরিক এবং গ্রিন কার্ড (Green Card) রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কিছু সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। কোনো ইমিগ্রেশন এজেন্ট (immigration agent) আদালতের অনুমতি ছাড়া তাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। বিমানবন্দরেও প্রত্যেক ভ্রমণকারীর পরিচয় এবং অভিবাসন বিষয়ক কাগজপত্র পরীক্ষার অধিকার রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এই তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *