শিরোনাম: মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশেও কি গাড়ির দাম বাড়বে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং গাড়ির দাম বাড়তে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশেও, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই শুল্ক বৃদ্ধি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বাজারে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বব্যাপী গাড়ির দামের ওপর প্রভাব ফেলবে।
প্রস্তাবিত এই শুল্ক নীতি অনুযায়ী, আমদানি করা গাড়ির যন্ত্রাংশের উপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। যদি এই শুল্ক কার্যকর হয়, তবে এর ফলস্বরূপ গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
এর কারণ হলো, গাড়ির যন্ত্রাংশের সরবরাহ ব্যবস্থা একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ আসে এবং একত্রিত হয়ে গাড়ি তৈরি হয়। এই শুল্কের কারণে গাড়ির মেরামত খরচও বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের গাড়ি মালিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি কার্যকর হলে, গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বাড়তে শুরু করবে এবং এর প্রভাব মেরামত বিলের ওপরও পড়বে। সাধারণত, একটি গাড়ির মেরামতের খরচের ৪০ শতাংশের বেশি যন্ত্রাংশের দামের উপর নির্ভরশীল থাকে।
ফলে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মেরামত খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বাড়ে, তবে গ্যারেজ মালিকরা সেই খরচ গ্রাহকদের উপর চাপাতে বাধ্য হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় $475.4 বিলিয়ন (প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং ইঞ্জিন আমদানি করেছে। এর মধ্যে কানাডা থেকে এসেছে প্রায় $57.08 বিলিয়ন (প্রায় ৬ হাজার ৩শ কোটি টাকা) এবং মেক্সিকো থেকে $182.3 বিলিয়ন (প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা)।
এখন যদি এই যন্ত্রাংশগুলির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, তবে গাড়ির দাম এবং মেরামতের খরচ উভয়ই বাড়তে পারে।
যদিও এই শুল্ক নীতি সরাসরি বাংলাদেশের গাড়ির বাজারে প্রভাব ফেলবে না, তবুও বিশ্ব অর্থনীতির সাথে আমাদের সংযোগের কারণে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের বাজারে আমদানি করা গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম বাড়লে, গাড়ির মালিকদের মেরামত খরচ বাড়বে।
এছাড়া, বিশ্ব বাজারে গাড়ির দাম বাড়লে, বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়তে পারে, কারণ অনেক গাড়ি প্রস্তুতকারক বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম এবং মেরামত খরচ স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। শুল্ক বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হতে পারে, যাতে ভোক্তাদের উপর এই বাড়তি খরচের বোঝা কমাতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে গাড়ির মালিকদের জন্য গাড়ির মেরামতের খরচ এবং গাড়ির দাম সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। মেরামতের আগে বিভিন্ন গ্যারেজের দাম যাচাই করা এবং যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারণা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
এছাড়া, ভবিষ্যতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের খরচ কমাতে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা যেতে পারে।
সার্বিক বিচারে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশের গাড়ির বাজারেও পরিবর্তন আসতে পারে। গাড়ির মালিক এবং ব্যবসায়ীদের এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন