ইরানের কুর্দি র্যাপার সামান ইয়াসিনের কারাজীবন: নির্যাতনের বিভীষিকা আর মুক্তির সংগ্রাম।
একজন শিল্পী, যিনি কণ্ঠরোধের শিকার হয়েছিলেন, অত্যাচারের বিভীষিকা পেরিয়ে অবশেষে মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন। ইরানের কুর্দি র্যাপার সামান ইয়াসিনের জীবন যুদ্ধের এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
২০২০ সালের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার কারণে কারাবন্দী হতে হয় তাকে। কারাগারে তার ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন।
২০২২ সালে, ইরানের তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেই ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইয়াসিন। প্রতিবাদে কণ্ঠ মেলাবার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আনা হয় ‘খোদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’র অভিযোগ।
এই অভিযোগে প্রথমে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হলেও, পরে তা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়াসিন তার কারাজীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার ওপর চালানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
তাকে একটি কুঠুরিতে বন্দী করে রাখা হতো, যেটিকে অন্য কয়েদিরা ‘মর্গ’ নামে ডাকত। সেখানকার তাপমাত্রা এতটাই কম ছিল যে, হাড় জমে যাওয়ার উপক্রম হতো।
ইয়াসিন আরও জানান, নির্যাতনের সময় তার নাকের ভেতর কলম ঢুকিয়ে আঘাত করা হতো।
নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তাকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়।
ইয়াসিন বলেন, কর্তৃপক্ষ তাকে একটি ভিডিওতে থাকা ঘটনার দায় স্বীকার করতে বাধ্য করে, যেখানে তিনি বিক্ষোভের সময় অস্ত্র ব্যবহার করেছেন বলে দেখানো হয়েছিল। যদিও, তিনি দাবি করেন, তিনি নির্দোষ।
কারাগারে থাকাকালীন ইয়াসিনের মুক্তির জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল।
অবশেষে, স্বাস্থ্যগত কারণে তাকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। তবে, মুক্তির কয়েক মাস পরেই তাকে আবার কারাগারে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইয়াসিন সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আর কারাগারে ফিরবেন না। তিনি দেশ ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে জার্মানির বার্লিনে বসবাস করছেন।
সেখানে তিনি নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন এবং তার ওপর হওয়া নির্যাতনের স্মৃতিগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বার্লিনে বসে ইয়াসিন এখন ইরানের মানুষের জন্য কথা বলতে চান। তিনি চান, তার কণ্ঠস্বর যেন নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হয়।
তার ভাষায়, “কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, আমি অনুভব করি, মানুষের প্রতি আমার বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। আমি তাদের কণ্ঠস্বর হতে চাই।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন